বছর দুয়েক আগে আচমকাই কিশোরীর গলার একটি অংশে লেবুর মতো ফোলা দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি তখন সাধারণ বলেই ধরে নিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু কয়েক মাস আগেই সেটা খারাপ দিকে মোড় নেয়। গলার বাঁ দিক ফুলে যায়। ফলে কিশোরীর মুখও এক দিকে বেঁকে যেতে থাকে। অবশেষে গলার একাংশ কেটে, প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এ অপারেশন করেন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমিরা খাতুন বিহারের বাসিন্দা। সে জানায়, প্রথমে যখন লেবুর মতো ছোট আকারে গলা ফুলেছিল, তখন স্থানীয় হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। এরপরে ধীরে ধীরে গলা আরও ফুলতে শুরু করে। পরে সেটি মারাত্মক রকম ফুলে যায়। 

আজমিরার মা জালাইসা বিবি বলেন, তখন খুব ভয় পেয়ে যাই। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, মেয়ের গলায় টিউমার হয়েছে। তার পরে কলকাতায় আসি। 

তিনি জানান, শেষ ছয় মাস ধরে মাঝেমধ্যেই এ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে আজমিরার চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। কিন্তু সবাই প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মাস তিনেক আগে হঠাৎ আজমিরার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তাকে এসএসকেএমে নিয়ে আসেন।

সেখানে নাক-কান-গলা বিভাগে আজমিরার গলায় ট্র্যাকিয়োস্টোমি করে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ওই বিভাগের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, মারাত্মক বিপজ্জনকভাবে টিউমারটি গলা ও ঘাড়ের অংশে ছিল। অস্ত্রোপচার খুব ঝুঁকির ছিল। কিন্তু না করেও উপায় ছিল না।

হেড অ্যান্ড নেক শল্য চিকিৎসক সৌরভ দত্ত জানান, টিউমারটি শ্বাসনালিকে এক পাশে ঠেলে দিয়েছিল। মেরুদণ্ডের সঙ্গেও লেগে ছিল ওই মাংসপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড থেকে যে ধমনীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালিত হয়, সেটি ঘিরে রেখেছিল ওই টিউমারটি। কোনোভাবে ওই ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে বড় বিপদ ঘটতে পারত।

পরীক্ষায় দেখা যায়, এটি স্নায়ুর টিউমার। পরে সৌর, হর্ষ ধর, পৌলোমী সাহা, সন্দীপন নস্কর, কামরান আহমেদ, অনিমেষ ঘোষ ও অ্যানাস্থেটিস্ট শ্রীপূর্ণা মণ্ডলের দল প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলভাবে টিউমারটি অপসারণ করেন।

ওএফ