দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। এই অবস্থায় শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ডায়াবেটিসের ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

শিশুদের স্থূলতা রোধ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে আরো জ্ঞান বিনিময় করা জরুরি বলেও মনে করছেন তারা ।

আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বারডেম মা ও শিশু হাসপাতালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।  

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান সময়ে অধিকাংশ শিশুই স্থূলতায় ভুগছে, এটি তাদের ডায়াবেটিসের জন্য বড় ঝুঁকি। তবে যারা ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে, নিয়মিত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন তাদের জীবন বাঁচাতে পারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে; যা ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২ লাখ হবে। এটি আমাদের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার। তবে, আরও ভয়াবহ বিষয় হলো ডায়াবেটিস আক্রান্তদের প্রায় বেশিরভাগই জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে, যা দিনে দিনে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। 

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। নিজের সুরক্ষায় ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানুন। আমরা যদি ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে এটাকে প্রতিরোধ করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, সবসময় আমাদের সবার দৃষ্টি থাকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ে, যা মূলত বয়স্কদের হয়ে থাকে। কারণ, আমাদের ১০০ জন ডায়াবেটিস রোগী থাকলে ৯৫ জনই টাইপ-২। আমরা কখনও চিন্তা করিনি যে, শিশুদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। বিশেষজ্ঞমহল থেকে শুরু করে সরকারও সেটি বুঝতে পারেনি। এসময় এটাকে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে ডায়াবেটিস সমিতি। আমি মনে করি এটা খুবই অ্যালার্মিং।

রোবেদ আমিন আরও বলেন, ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্তদের ডায়াবেটিস আছে কি না, এমনটা জানার জন্য সাড়ে ৭ হাজার স্যাম্পল নিয়ে একটা গবেষণা করেছিলাম, সেখানে দেখা গেছে ৩ শতাংশের মতো প্রিভিলেন্স। তাহলে দেখেন, জন্ম থেকে শুরু করে যেকোন বয়সেই ডায়াবেটিস হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের শিশুদের ডায়াবেটিস হয়েই যাচ্ছে সেহেতু তাদের ইনসুলিন ছাড়া জীবন হুমকির মুখে পড়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের জন্য ইনসুলিন হলো জীবন রক্ষাকারী একটি প্রক্রিয়া, যা ছাড়া তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করছে ডেনমার্ক ভিত্তিক একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নভো নরডিক্স। ফলে বিনামূল্যে ইনসুলিনের পাশাপাশি, প্রতি মাসে পরামর্শ, এইচবিএওয়ান সি পরীক্ষা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, সিরিঞ্জ, স্ট্রাইপসহ গ্লুকোমিটার, বার্ষিক শিশুদের ডায়াবেটিস ক্যাম্প, সরাসরি চিকিৎসার ও টেলিমেডিসিন সেবা পাচ্ছে শিশুরা।

নভো নরডিস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড জেনারেল ম্যানেজার রাজর্শী দে সরকার বলেন, নিত্য নতুন উদ্ভাবন ও মানসম্পন্ন ওষুধ নিয়ে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশে মানুষের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে নভো নরডিস্ক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই উদ্যোগের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো দেশগুলোর জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে ডায়াবেটিস সেবার মান উন্নতকরণ এবং শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বিশেষ সেবা উন্নয়ন। 

টিআই/এনএফ