বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রি-ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ষা করা গেলে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা সঞ্চয় হবে। এ টাকা দিয়ে আরো কয়েকটি পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে।

রোববার (২০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ আয়োজিত ডায়াবেটিস নিয়ে মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর বাইরে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

আরও পড়ুন>> ডায়াবেটিস চিকিৎসায় যুগান্তকারী ঘটনা

উপাচার্য বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীর চর্চা, খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীর চর্চার জন্য যত দ্রুত সম্ভব জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হবে। আমাদের জিহ্বায় যা ভালো লাগে তার অধিকাংশই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক কথায় জীবনাচার নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবেটিস প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধও সম্ভব।

তিনি বলেন, ডায়াবেটিস নির্মূলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন কংগ্রেস আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়াবেটিসের ব্যয়বহুল ওষুধ মেড ফর মেড বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একে এম মোশাররফ হোসেন তার মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম, নেফ্রোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ ফজলুল সেলিম, অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী।

এদিকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী স্ক্রিনিং ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও-রেটিনা) ডা. তারিক রেজা আলী বলেন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী সারা বিশ্বে ২০-৭৪ বছর বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। এই রোগের প্রকোপ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ৩৪.৬ শতাংশ। এদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চোখে বিশেষ করে রেটিনায় কোনো সমস্যা আছে কি না তা নির্ণয়ের কোনো সঠিক দিক রেখা আমাদের দেশে তৈরি হয়নি।

তিনি বলেন, প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীর বছরে অন্তত একবার চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা জরুরি। একটি বিশেষ ড্রপ দিয়ে সহজেই চোখের মণির আকার বড় করে এই পরীক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামগ্রিক অন্ধত্বের শতকরা ২.৫ শতাংশ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথীর কারণে হয়ে থাকে। এ কারণে দেশে ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের রোগ, বিশেষ করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী আছে কি না তা স্ক্রিনিং করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

তারিক রেজা আলী বলেন, চোখ পরীক্ষা করা ছাড়াও রেটিনার ছবি তোলা, প্রয়োজনে অন্যান্য বিশেষায়িত পরীক্ষা যেমন ফ্লুনারিজিন, এনজিওগ্রাফি, অপটিক্যাল, কোহেরেন্স টমোগ্রাফী ইত্যাদি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এসবের জন্য পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং সেন্টার ও রেফারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। আমাদের দেশে যেহেতু চিকিৎসক ও রেটিনা বিশেষজ্ঞের স্বল্পতা রয়েছে, তাই এই ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনকে জনপ্রিয় করা যায়।

অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্রজনন বিষয়ক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর ৮০ শতাংশ মারা যায় হার্ট অ্যাটাকে। ডায়াবেটিস না থাকলে কিডনি রোগী অনেক কমে যেত। ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করে তাদের ডায়াবেটিস নেই, কিন্তু টেস্ট করলে দেখা যায় তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা এতো বেশি যে ওষুধ বা ইনসুলিন শুরু করতে হয়। ডায়াবেটিস থেকে অন্য রোগ হওয়ার কারণে খরচ আরো বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যয় হয়।

সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসানাত ও অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। সেমিনার সঞ্চালনা করেন রেসপেরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষকসহ চিকিৎসকরাও অংশগ্রহণ করেন।

টিআই/জেডএস