জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল গত তিন বছরে (২০১৮-২০২০ সাল) ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা পুরুষদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত। শতকরা বিবেচনায় যা ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়াও নারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যান্সার, যা প্রায় ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন ২০১৮-২০২০ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের বিদায়ী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। 

তিনি জানান, ২০১৮-২০২০ সালের প্রকাশিতব্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন বছরে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটে ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী সেবার জন্য এসেছেন, যাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৩৩ (৪২.৬%) জনের চূড়ান্ত কিংবা প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় হয়েছে। 

ডা. রাসকিন জানান, নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫%) পুরুষ ও  ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫%) নারী। নারীপুরুষ নির্বিশেষে শীর্ষ দশ ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুস (১৭.৪%), স্তন (১৩.৪%), জরায়ুমুখ (১০.৯%), খাদ্যনালী (৪.৯%), পাকস্থলী (৪.৩%), লিভার (৩.৯%), লসিকা গ্রন্থি (৩.৮%), মলাশয় (৩.১%), গাল (৩%) ও পিত্তথলির (১.৫%) ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে শীর্ষ ক্যান্সার ফুসফুস (২৬.৬%) এবং নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার (২৯.৩%)। 

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাতীয়ভাবে একবার জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণা করেছিল, এরপর আর হয়নি। নতুন করে করার আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এটি হওয়া জরুরি। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটি গবেষণা মানে রোগীর ডায়াগনোসিস থেকে শুরু করে তার অবস্থা কোন পর্যায়ে, কোথায় গিয়ে থামতে পারে সব লিপিবদ্ধ করা। যেটি অনেক বেশি কঠিন। কারণ, আমাদের ডায়াগোনসিস ও সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। 

ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধের বিকল্প নেই জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, পরিবেশ ও খাদ্যাভাসও ক্যান্সারের বড় একটি কারণ। কয়েক বছর আগেও এটি নিয়ে কাজ করা অতটা সহজ ছিল না। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ততটা উন্নত ছিল না। এখন পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ইনস্টিটিউট দরকার। নতুন করে আটটি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেখানে হয়তো হবে। কিন্তু যারা করবে তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ধূমপানসহ নানা অভ্যাসের কারণে নিজেরাই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছি কি না ভেবে দেখা উচিত। পাশাপাশি এটি নিযন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নীতি-নির্ধারকদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য ও কোনটি চিকিৎসা ছাড়া হবে না সেটি নির্ণয় করতে হবে। একই সঙ্গে পৃথক লিঙ্গ ও বয়সকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বয়সে কোন ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সেটি দেখতে হবে।

টিআই/এনএফ