উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকরা যেতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, সব চিকিৎসকরাই শহরমুখী হতে চায়। অনেক এলাকায় কোনো সার্জন পাওয়া যায় না। এতে সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষায় মোরাল পার্ট যুক্ত করতে হবে। চিকিৎসক পেশা একটি সম্মান ও সেনসিটিভ কাজ। এসময় দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষাখাতে শিক্ষকের ঘটতি রয়েছে স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। এটি সহসায় পূরণ করা সম্ভব না হলেও শিক্ষক ঘাটতি পূরণে কাজ চলমান রয়েছেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও নাম-ডাকের প্রয়োজন। কিন্তু তা এখনও কেন নেই সেটি বিবেচনা করতে হবে। স্বাধীনতার পর দেশে মাত্র ৮টি মেডিকেল কলেজ ছিল এখন সরকারি-বেসরকারি মিলে মেডিকেল সংখ্যা ১১০টি। যত দ্রুত মেডিকেল কলেজ হয়ে ততদ্রুত শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে সাময়িক শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে এই ঘাটতি দূর করতে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে আমাদের শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এক সময় দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, এখন ৪টি আছে। দেশে ৪২৯টি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। আমাদের ম্যাটস, আইএইচটি রয়েছে। এ সময়ে দেশের জনসংখ্যাও বেড়েছে, তবে জনসংখ্যার তুলনায় প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যক বেড়েছে। মেডিকেল শিক্ষার জন্য অবকাঠামো দরকার। তা হয়েছে, ধাপে ধাপে সব দিকেই আগাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাস্থ্যখাতে এগিয়ে গেছে, এর প্রমাণ আমাদের মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার অনেক কমেছে। এক সময় আমাদের ভ্যাকসিনেশনের হার শতকরা ২০ শতাংশও ছিল না। এখন তা শতভাগ হয়েছে। ভ্যাকসিনেশনে সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আমরা টিকাদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অনেক যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের মতো বড় বড় দেশও পারেনি। এটা কোনো যাদুর বলে হয়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো ও জনবল থাকায় আমরা এটি করেতে পেরেছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেডিকেল শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতের হৃদয়। তাই এটাকে অবহেলা করে চলা যাবে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেক ভালো কাজ করেছে। আজকের এই কর্মশালা তার অন্যতম প্রমাণ।

মেডিকেল উচ্চ শিক্ষায় শৃঙ্খলা আনার কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মেডিকেল উচ্চশিক্ষায় শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আমরা রেসিডেন্সির এমডি, এমএস ও এফসিপিএস ডিগ্রির মধ্যে সমতা এনেছি। একইসঙ্গে যেনো কোনো চিকিৎসক একাধিক ডিগ্রি না গ্রহণ করে সেই উদ্যোগও নিয়েছি।

এ খাতের মান উন্নয়নে দেশে মেডিকেল শিক্ষা কমিশন প্রয়োজন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে মেডিকেল সেবা কমিশন গঠন করতে হবে। এতে শিক্ষা ও সেবার মান নিশ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলমপ্রমুখ, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থায়ী প্রতিনিধি ড. বার্ডান জুং রানা, অঞ্চলিক পরামর্শক ড. ইবাদত দিলান প্রমুখ। 

টিআই/এসএম