স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত করেছেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম। এই সময়টিতে নানা সফলতার পাশাপাশি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব।

বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর হোটেল রেঁনেসায় আয়োজিত ৫ম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) খসড়া স্ট্রাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমার দুইবছর আট মাসের মতো কাজের অভিজ্ঞতা। আমাদের প্রতিবছর অসংখ্য পরিকল্পনা থাকে, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কাজ করতে না পারার কারণগুলোর মধ্যে প্রথম হলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অনভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব।

তিনি বলেন, আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো, যেকোনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে কাজে দায়মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু এটা আমরা ঠিকমতো পাচ্ছি না। এর আরেকটি কারণ হলো বিভাগগুলোতে এমন লোকজন পদায়িত হচ্ছেন, যারা তাদের চাকরির শেষ সময়ে। তারা ওই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে বড় কোনো কাজও করতে চান না। শেষ সময়টা তারা পায়ে পা তুলেই কাটিয়ে দেন। এজন্য আমি মনে করি, কোনো দায়িত্বে পদায়নের ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর সময় নিয়ে দেওয়া উচিত।

খুরশিদ আলম বলেন, আমাদের লাইন ডিরেক্টর আর ডিরেক্টর পদ নিয়ে কিছু বিরোধ আছে, যে কারণে অনেক কাজও আটকে আছে। আমাদের রেফারেল সিস্টেম এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এমনকি আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও নানা সমস্যা আছে। আমাদের উচিত উবার ও পাঠাওয়ের মতো অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা।

গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, গবেষণায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। গবেষণা বাড়াতে হলে আইইডিসিআরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, তাহলে রিসার্চ আরও এগিয়ে যাবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারকে (নিলমার) আমরা শক্তিশালী করতে পারিনি। এটিকেও আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের জন্য মেডিকেল ওয়েস্ট মেনেজম্যান্ট (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) একটি বড় ঝুঁকির বিষয়, এটিকেও এইচপিএনএসপি প্ল্যানে যুক্ত করতে হবে। জন্মগত বধির শিশুকে দুই বছরের মধ্যে শনাক্ত করতে পারলে তাদের সুস্থ করে তোলা যায়। এইচপিএনএসপি প্ল্যানে ওরাল হেলথকেও আনা দরকার।

সবশেষে খুরশিদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের সমস্যা ও অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়, এর কারণ হলো আমাদের প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের অভাবে এরকম হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

এছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, বিএমএর সভাপতি ও মহাসচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার মহাপরিচালকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, লাইন ডিরেক্টর, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

টিআই/কেএ