প্রত্যেক লিভারেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তখনই তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে বেশির ভাগেরই ধারণা, কেবলমাত্র মদ্যপানের অভ্যাস থেকেই এই অসুখ হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ধারণা একেবারেই সত্যি নয়।

ফ্যাটি লিভার মূলত দু’রকমের। অ্যালকোহলিক এবং নন অ্যালকোহলিক। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। কিন্তু নন অ্যালকোহলিক ফ্যাট জমে মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদানের মাত্রা বেড়ে গেলে। কখনো কখনো নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বংশগত কারণেও হতে পারে। সময়মতো সতর্ক না হলে এই ফ্যাটি লিভারের হাত ধরেই হানা দিতে পারে লিভার সিরোসিস। 

গবেষণা বলছে, ইদানীং নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলও নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে। একসঙ্গে এগুলোকে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ও বলা হয়।

নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কি না, তা বোঝা সহজ নয়। তবে কয়েকটি লক্ষণ শরীরে ফুটে ওঠে। সেগুলো জানা থাকলে অতি অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। লক্ষণগুলো হলো─

১) খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময়ে তার হাত ধরে ফ্যাটি লিভার হানা দেয় শরীরে। যদি খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর মাত্রা আরো বাড়তে থাকে, তা হলে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি, ফ্যাটি লিভার হয়েছে কি না।

৩) শরীরে মেদ জমছে, আর তার সঙ্গে ঘন ঘন ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন? এমন হলে কিন্তু বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কোনো কারণ ছাড়া ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ হতে পারে।

৪) ফ্যাটি লিভারের কারণে শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ ভালো করে বেরোতে পারে না। তাই নজর রাখুন প্রস্রাবের রং ও গন্ধের দিকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ার পরেও একটানা প্রস্রাবের রং হলুদ হতে থাকলে ও দুর্গন্ধ থাকলে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে সচেতন হন।

৫) ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেকের খুধাও বেড়ে যায়। ভাজাপোড়া এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। হঠাৎই এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

এ ছাড়াও ফ্যাটি লিভারের সব থেকে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ বা ভুঁড়ি। লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যহত হয়। খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়, দ্রুত ওজন কমা, বমি বমি ভাব, বমিও হওয়া, খুব দুর্বল লাগা ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না।  ফ্যাটি লিভার হলে মাথাব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। নখ বা চোখ হলদেটে লাগলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। 

এমএ