দেশের প্রতিটি প্রান্তে মিডওয়াইফের সেবা সহজলভ্য করা গেলে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব যেমন বাড়বে, তেমনি মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে উল্লেখযোগ্য হারে। এমনকি দক্ষ মিডওয়াইফরা সঠিক কাজের পরিবেশ পেয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারলেও দেশে মাতৃমৃত্যুর হার আরও কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (২৮ মে) আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সহযোগিতায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফারি এডুকেশন প্রোগ্রাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের 'মিডওয়াইফদের কর্মপরিবেশ এবং তাদের দক্ষতা প্রয়োগের পর্যালোচনা' শীর্ষক একটি গবেষণা তুলে ধরেন গবেষক ড. জাহিদুল কাইয়ুম।

তিনি বলেন, আমাদের উচিত মিডওয়াইফারি দক্ষতা যেখানে যতটা সম্ভব ব্যবহার করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি এমন একটি উপায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারের চেষ্টা করা উচিত যাতে মিডওয়াইফরা নিরাপদ মাতৃত্বে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। মিডওয়াইফরা প্রাইভেট সেক্টরে একজন সম্ভাব্য উদ্যোক্তাও হতে পারে, যা মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।

প্রতিষ্ঠানটির মিডওয়াইফারি এডুকেশন প্রোগ্রামের প্রধান ডা. শারমিনা রহমান বলেন, মিডওয়াইফাদের শুধু নিয়োগ করলেই হবে না, তাদেরকে তাদের কাজটা ঠিকভাবে করতে দিতে হবে। গর্ভবতী মা এবং তার নবজাতকের জন্য যে সেবাগুলো তার দেওয়ার কথা, তাকে সেই সেবাটাই ঠিকভাবে দিতে হবে। মিডওয়াইফকে দিয়ে নার্সের কাজ করানো যাবে না।

এসময় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে এবং মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে যেসব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেগুলো অর্জন করতে হলে আমাদের ব্যতিক্রমভাবে চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মিডওয়াইফারির পেশা হিসেবে সম্প্রসারণ এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের নিয়োগ একটি অপরিহার্য বিষয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের মূল অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে মিডওয়াইফরা তাদের কর্মক্ষেত্রে 'মিডওয়াইফ' পদবি নিয়ে নিযুক্ত হওয়ার পরও প্রায়ই দেখা যায় তাদের পেশাগত ভূমিকার পরিবর্তে নার্সিং সেবা দিতে কিংবা অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই চিত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি দেখা গেছে, যেখানে মিডওয়াইফরা নিয়মিতভাবেই নার্সের কাজ করছে।

গবেষণায় পাওয়া গেছে, মিডওয়াইফদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মিডওয়াইফের নির্ধারিত সেবা দেওয়ার বদলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিবেদনটি বলছে, মিডওয়াইফারি দক্ষতা সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করে মিডওয়াইফের সেবার পরিধি নির্দিষ্ট করে তারপর জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোতে তাদের পদায়ন করাটা জরুরি।

২৫৬ জন পেশাজীবীর ওপর পরিচালিত এই জরিপ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ উঠে এসেছে। মিডওয়াইফরা তাদের পেশা সম্পর্কে আশাবাদী এবং তাদের পেশার উন্নয়নে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

পরামর্শে সরকারি খাতে মিডওয়াইফ নিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মিডওয়াইফারি পদ সৃষ্টি করার আবেদন জানিয়েছেন তারা। মিডওয়াইফারি পেশা সম্পর্কে সমাজের সব স্তরের মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়ানোর এবং প্রসূতি মা ও তার নবজাতকের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাওয়ার ওপর বিশেষ জোর দেন। তারা মনে করেন বাংলাদেশ যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় মিডওয়াইফদের ভূমিকার ব্যাপারে সচেতন হয়, তাহলে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব বাড়িয়ে মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব।

টিআই/জেডএস