মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মারাত্মক শারীরিক ত্রুটি ধরা পড়ায় অনাগত সন্তানকে গর্ভেই মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছিলেন বাবা-মা। এক পর্যায়ে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেষ্টায় জন্মগত ত্রুটি সেরে সুস্থ জীবন পেয়েছে শিশুটি। তার নাম রাখা হয়েছে বেহেশতি ঝরনা।

সোমবার (২৯ মে) ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. টাবলু আব্দুল হানিফ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি জানান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মায়ের গর্ভে মানব ভ্রুণটির বয়স যখন ২২ সপ্তাহ, তখন আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে জানা যায় তার পাকস্থলিতে একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে। তার ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনামে খাবার পৌঁছাবে না, মেডিকেলের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিওডেনাল এট্রেসিয়া। পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা এই জন্মগত ত্রুটির কথা জানতে পেরে গর্ভেই ওই ভ্রুণটি ধ্বংস করার পরামর্শ দেন।

কিন্তু হাল ছাড়তে চাচ্ছিলেন না বাবা-মা। তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসের শরণাপন্ন হন। মুনিরা ফেরদৌস তাদের ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা ওই মা-বাবাকে আশ্বাস দেন, শিশুটি পৃথিবীতে এলে তারা চেষ্টা করবেন তাকে সুস্থ করে তুলতে।

ওই আশ্বাসে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মা।

ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেষ্টায় অবশেষে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখে। এনেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দিলীপ ভৌমিক, নিওনেটাল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জগলুল গাফফার খান জিয়া এবং ডা. পার্থ সারথি মজুমদার তিনদিন বয়সী ১.৭ কেজি ওজনের শিশুটির বাইপাস অপারেশন করেন। পরে হাসপাতালের শিশু নবজাতক বিভাগের ডা. ইশরাত লাকী, এনআইসিইও কেয়ার টিম এবং শিশু সার্জারি বিভাগের ডা. আহমদ জাহিদ হোসেন সোহেলের ফলোআপ অপারেশনের ছয়দিন পর শিশুটি মায়ের বুকের দুধ খেতে পায়।

আজ (সোমবার) শিশুটিকে সুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. টাবলু আব্দুল হানিফ বলেন, ত্রুটি থাকা বাচ্চাকে মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকে আমরা ফলোআপ করি। কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নেওয়ার পর শিশুটিকে আমরা স্বাভাবিক পাই। তবে কিছু ক্ষেত্রে সে আমাদের ফলোআপে থাকে। সবশেষে ফলোআপ অপারেশন করার পর সে ভালো হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বাচ্চা না হওয়ার জন্য ‘বন্ধ্যাত্ব’ একটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে মায়ের গর্ভের কোনো বাচ্চা মেরে ফেলাটা হবে খুবই নির্মমতা। এরকম কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশু সার্জনদের মতামত নেবেন। জটিল কার্ডিয়াক এনোমালি ছাড়া বেশিরভাগ জন্মগত ত্রুটি অপারেশনের মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। আর যেসব বাচ্চার বেশি জটিলতা থাকে তা আগেই এবোরশন হয়ে যায়।

টিআই/কেএ