বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। গত বছর এই বাজেটের পরিমাণ ছিল ৫৭২ কোটি ৫ লাখ। এ বছর বাজেটের আকার বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতি ১৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

সোমবার (২৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় এ বাজেট অনুমোদিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

জানা গেছে, এবারের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ২০২১ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা। গবেষণার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাজেটে চিকিৎসা ও শৈল্য খাতে (এমএসআর) ২৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ৪২ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সভায় দেশের একমাত্র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বিলম্বে চালুর জন্য যথাসময়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না আসার বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলে ধরা হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব যন্ত্রপাতি চলে আসবে এবং সে অনুসারেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো ডায়ালাইসিস মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, এইচআইএস, আর্থোস্কোপিক মেশিনসহ এ জাতীয় অত্যন্ত জরুরি মেডিকেল যন্ত্রপাতি না পাওয়ার কারণেই মূলত হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগ চালু করতে বিলম্ব হয়। তবে ইতোমধ্যে সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শসেবা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুব্যবস্থা করা হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন এবং এমআরআই, সিটি স্ক্যান, বিএমডিসহ প্রায় ৪০ হাজার টেস্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সভায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের বিষয়টি ও বাজেট সংক্রান্ত বিষয় সর্বসম্মতিতে অনুমোদিত হয়। এসময় জানানো হয়, জুলাই মাসের ৫ তারিখে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের রোগী ভর্তি  ও অপারেশন কার্যক্রম চালু করা হবে।

বিএসএমএমইউ সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত আবশ্যিক বিষয় হলো এনাটমি, ফিজিওলজিসহ বিভিন্ন বেসিক কোর্স। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বেসিক কোর্সগুলোতে আগের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় এবং যা আজকের সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন তাদের প্রাপ্য ঝুঁকিভাতা থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান প্রশাসন তাদের ন্যায্য দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বছরে দুটি ঝুঁকিভাতা চালু করেছে এবং এ বিষয়টিও সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভাতার (শিক্ষা বৃত্তি) পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন বলে সিন্ডিকেটে দাবি করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ, সংসদ সদস্য বেগম ফরিদা খানম, বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, বিসিপিএসের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাসহ আরও অনেকে।

টিআই/এসএসএইচ/