প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হাসপাতালগুলোতে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে ঢাকা শহরকে হাসপাতালে পরিণত করলেও সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। করোনার উৎপত্তির উৎস বন্ধ না করলে শুধুমাত্র সেবা দিয়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নতুন ১০টি আইসিইউ বেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায় সব হাসপাতালের বেড বাড়ানোর চেষ্টা করছি, সাধারণ রোগী কমিয়ে করোনা রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। যদিও সাধারণ রোগীদেরও এতে কষ্ট হবে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা আর করোনারোগী বৃদ্ধি- দুটো মিলে স্বাস্থ্যসেবার ওপর বিরাট চাপ। আমাদের ডাক্তার-নার্সরা টানা কাজ করতে করতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের আমরা ছুটি দিতে পারছি না। এ অবস্থায় যদি আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তবে হাসপাতালে আর রোগী জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানা ছেড়ে দেওয়া। স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা না করে তারা বিনোদন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেছে। গত একমাসে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ভ্রমণ করেছে। পাশাপাশি সারাদেশে কোথাও কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। এটাই আমাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎস বন্ধ না করলে সিট বা সেবা বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না।’

’এজন্য যা করার এখনই করতে হবে। এ মুহূর্তে যা করতে হবে তা হচ্ছে, যে যে স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে সেসব স্থানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর ১৮টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে’- যোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, করোনা রোগীদের জন্য সরকারিভাবে আরও ২ হাজার ৫০০ বেড যুক্ত করা হবে। বেসরকারি হাসপাতালেগুলোতেও নতুন এক হাজার বেড বাড়ানো হবে। তার মানে নতুন করে সাড়ে তিন হাজার বেড বাড়ানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনা নিয়ন্ত্রণ কাজ যাচ্ছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যতটুকু সামর্থ্য আছে করছি, তা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সবকিছুর একটা সীমা আছে। আজকে আমরা যেভাবে, বেখেয়ালিভাবে চলাফেরা করছি, যদি আমরা চলাফেরা করি তাহলে আগামী দিনগুলোতে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। এখনই সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনার।

সবােইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে সজাগ হতে হবে। সরকারের দেওয়া ১৮টি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এটা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য। আমি সুস্থ না থাকলে দেশ সুস্থ থাকবে না। এক বছর করোনা নিয়ে কাজ করছি। আমরা সুন্দরভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি।

করোনা নিয়ন্ত্রণের সফলতার কারণে দেশের সুনাম এসেছিল জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, তবে আমাদের খুশি কাল হয়েছে, গত চার মাসে করোনা যে হারে না বেড়েছে...। তা গত এক সপ্তাহে তার থেকে বেশি বেড়েছে। করোনার শনাক্তের হার ২ শতাংশে নেমে আসছিল গত এক সপ্তাহে ২০ শতাংশের ওপরে ছাড়িয়েছে। এক সপ্তাহের সব হাসপাতালের রোগী বেড়ে গেছে। রোগী বাড়ার কারণ কী এর বিষয়ে জনগণকে অবহিত হতে হবে। নিজেকে নিজের রক্ষা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আগুন লাগার পর রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪টি আইসিইউ নষ্ট হয় যায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আবার ১০টি নতুন আইসিইউ চালু করতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা সুসংবাদ।

টিআই/এসএম/জেএস