দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন হাজারে ১২ জন
বাংলাদেশে হাজারে প্রায় ১২ জন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১২ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আর দেশে প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
রোববার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু। তিনি বলেন, বিশ্বে বর্তমানে ১০১ মিলিয়ন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জীবনযাপন করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। আর বাংলাদেশেও এই হার কিন্তু কম নয়। স্ট্রোকে মারা যাওয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে হয়ে থাকে।
অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, স্ট্রোক ভয়াবহ রোগ। ১৯৯৬ সালের আগে বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকের চিকিৎসা ছিল না। আমাদের দেশেও স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা শুরু হয় বছর দশেক আগে। এখন স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা সরকারি ও বেসরকারিভাবে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, যদি মুখ বেঁকে যায়, এক হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা সম্ভব।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, আইভি থ্রোম্বলাইসিস ছাড়াও স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা মেকানিকাল থ্রোম্বেক্টমি দেশেই হচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্ট্রোকের ৬ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে আনা হলেও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে ক্ষেত্র বিশেষে স্ট্রোকের ৬ ঘণ্টা পরেও আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা যায়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মামুন মুস্তাফির (অব) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক এস এ খান। আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র কুন্ডু, অধ্যাপক খুরশীদ মাহমুদ, ডা. শিরাজী শাফিকুল ইসলাম, ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজ।
এসময় ডা. শিরাজী শাফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা আছে। বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে (বিএসএইচ) স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র কুন্ডু বলেন, স্ট্রোকের ৯০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। মাত্র ১০টি কারণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলস্টেরলের আধিক্য, ধুমপান, মদপান নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়।
অধ্যাপক খুরশীদ মাহমুদ বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসায় রিহ্যাবিলিটেশনের ভূমিকা অনেক। স্ট্রোকের পর থেকেই রিহ্যাবিলিটেশন শুরু করতে হয়। রিহ্যাবিলিটেশন মানে কিন্তু ফিজিওথেরাপি নয়। ফিজিক্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্টের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করেন। স্ট্রোকের পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থভাবে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে রিহ্যাবিলিটেশন টিম কাজ করে।
ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজ বলেন, বর্তমানে রক্তনালী ঘটিত রোগ যেমন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মহামারি চলছে। এ মহামারি রুখতে কাজ করতে হবে সবাইকে।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক এস এ খান বলেন, স্ট্রোক ভয়াবহ রোগ। পরিবারে কেউ স্ট্রোক আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারই পথে বসে যায়। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসাগুলো আগে শুধু উন্নত বিশ্বে হতো। এখন বাংলাদেশে হচ্ছে এটা খুব ভালো লাগার মতো খবর। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দিতে পেরে গর্বিত।
টিআই/এমএ