এইডস মানেই যেন ভয়ানক ও লজ্জাজনক কিছুর নাম। নানা কুসংস্কার, বৈষম্যের শিকার হন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা। কিন্তু হাসপাতালে গোপনীয়তার অভাব ও সামাজিকভাবে হেনস্তার ভয়ে অনেকেই এইডস পরীক্ষা করাতে চান না। তবে দেশে এখন শুরু হয়েছে এইচআইভি বা এইডসের সেলফ টেস্ট ব্যবস্থা।

দেশে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা করা সম্ভব বলে দেশের এইচআইভি কর্মসূচিকে ছয় হাজার সেলফ টেস্ট কিট অনুদান দিয়েছে দ্যা গ্লোবাল ফান্ড। ফলে এখন থেকে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার মতো যে কেউ এইডসের পরীক্ষা ঘরে বসেই করতে পারবেন।

জানা গেছে, সেলফ টেস্ট এক ধরনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা। যা রক্ত বা মুখের লালা দিয়ে করা সম্ভব। টেস্টকিটে নমুনা দেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি সরকারের এইডস/এসটিডি কর্মসূচির পক্ষ থেকে এ ধরনের কিট বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এইচআইভি পরীক্ষার সঙ্গে কুসংস্কার ও বৈষম্য জড়িত। তাই সাধারণ মানুষ এইচআইভি পরীক্ষা স্বেচ্ছায় করতে আগ্রহী হয় না। প্রতিবেশী বা পরিচিত ব্যক্তি বিষয়টি জেনে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। অনেক সময় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সময়ের সঙ্গে ও ক্লায়েন্টের সময়ের সমন্বয় হয় না। এ ক্ষেত্রে ‘সেলফ টেস্টিং’ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিবি-এলএএসপি/এইডস-এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এই টেস্ট কিটের অন্যতম সুবিধা হলো এটি নির্ভুল এবং স্বল্প সময়ে ফলাফল নির্ণয়ে সহায়ক। ব্যবহারকারীর আস্থা তৈরি হয় এবং কুসংস্কার বা বৈষম্যের আশঙ্কা থাকে না। গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়, মূল্যও কম।

তিনি বলেন, সেলফ টেস্টিং পদ্ধতি জনপ্রিয় করার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে পরীক্ষার হার বাড়ানো যেতে পারে।

ইউএন এইডসের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা ৯০-৯০-৯০ (৯০ শতাংশ আক্রান্তদের পরীক্ষার আওতায় আনা, শনাক্তদের ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনা এবং চিকিৎসাধীন ৯০ শতাংশ রোগীর ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে রাখা) অর্জনে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা দেশে শুরু করা প্রয়োজন। যত বেশি পরীক্ষা হবে তত বেশি রোগী চিহ্নিত করা যাবে। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৯৫-৯৫-৯৫।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নতুনভাবে ৬৫৮ জনের শরীরে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ, ২১ শতাংশ নারী এবং তিন শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। নতুনভাবে আক্রান্ত হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে বিবাহিতদের সংখ্যাই বেশি। এদের আনুপাতিক হার ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ। আর অবিবাহিতদের হার ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়াও দেশে বর্তমানে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১২৪ জনের শরীরে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে।

ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, নভেম্বর ২০১৯ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এক বছরে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯ জন এইচআইভি এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে নতুনভাবে ৬৫৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৭৬ শতাংশ, নারী ২১ শতাংশ এবং তিন শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ। ১২৪ জন রোহিঙ্গা। এ ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৮৩ জন।

তিনি বলেন, নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৭ জন, খুলনায় ৬৪ জন, সিলেটে ৪৫জন, বরিশালে ২৮জন, রাজশাহীতে ২৭জন, এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫জন শনাক্ত হয়েছেন।

এছাড়াও নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে, ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং ২ দশমিক ০৭ শতাংশ ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

সূত্র মতে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এইচআইভি এইডস সংক্রমণের হার ০ দশমিক ০১ শতাংশের নিচে। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান সরকারের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে।

টিআই/এসকেডি