আইনের দুর্বলতায় ব্যবসা বাড়াচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো
তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় এখনই বিদ্যমান ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, আইনের বিভিন্ন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো দিন দিন তাদের ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করছে। এতে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তরুণ সমাজ ও সাধারণ নাগরিকরা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার অদূরে গ্রিনভিউ রিসোর্টে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ ও তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিজ্ঞাপন
কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ই-সিগারেট নিয়ে বাংলাদেশে তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে তরুণদের লক্ষ করে সিগারেট ছাড়ার মাধ্যম হিসেবে ই-সিগারেট/ভ্যাপ নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে তারা। একইসঙ্গে সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর তুলে ধরে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের ব্যবসার স্বার্থে।
তিনি বলেন, ই-সিগারেট কোনোভাবেই সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর নয় । তাই বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা বন্ধে ভ্যাপ, হিটেড টোব্যাকোসহ সব ধরনের ই-সিগারেট এখনই নিষিদ্ধ করার সঠিক সময়।
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে বিভিন্ন কূট-কৌশল ব্যবহার করছে। তারা তরুণদের আকৃষ্ট করতে নিত্যনতুন পণ্য বাজারে আনছে। ফলে তরুণরা না বুঝে নেশায় আসক্ত হচ্ছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এখনই সংশোধন করা প্রয়োজন।
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস, বাংলাদেশের এডভোকেসি ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান মাসুদ।
তিনি বলেন, আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কয়েকটি জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য করে সেগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। সেগুলো হলো- আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
আজকের এই কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস, বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোগ্রামস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কনসালটেন্ট শরফ উদ্দিন আহমেদ, সন্ধানীর উপদেষ্টা ডা. আয়েশা সিদ্দিকাসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
টিআই/এসকেডি