চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে সর্বোচ্চ ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছে, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৭১ শতাংশ।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অডিটোরিয়াম ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ক অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০০১ সালে প্রথম দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ভাইরাসজনিত এ রোগে সারা দেশের মোট ৩৪টি জেলায় ছড়িয়েছে। রোগটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৯ জন আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ২৪০ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার শতকরা ৭১ শতাংশ। মৃত্যুহার বিবেচনা যা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ১৪ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন।

২০২৩ সালের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, চলতি বছর সারা দেশের মোট সাতটি জেলায় ১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে। এটি নতুন করে শঙ্কার কারণ। এতদিন শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলে ঘটছে ধারণা করা হলেও এখন তা মধ্য অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

অনুষ্ঠানে ওয়ান হেলথের ড. নিতিশ দেবনাথ বলেন, অনেক দিন যাবত মানুষকে সচেতনে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সচেতনতা তৈরি হয়নি। নিপাহ ভাইরাস অত্যন্ত কমপ্লেক্স একটি রোগ। আমরা জনি নিপাহ ভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষে ছড়ায়। কিন্তু এটা কমপ্লেক্স প্রক্রিয়াতেও ঘটতে পারে। যেমনটা আমরা প্রথম সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখেছি। বাদুড়ের খাওয়া ফল শূকর, আর শূকর থেকে নিপাহ মানুষে ছড়িয়েছে। এটি আমাদের দেশেও ঘটতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবুল হোসেন মঈনুল হোসেন, আমরা যতদিন আইনি বিধির মধ্যে না আনবো তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। খাবেন না বললেই মানুষ খেজুরের রস খাবে না তা নয়। এই বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় কিনা তা আইইডিসিআর বিবেচনা করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, আমরা যে তথ্যটা দিয়েছি তা কনফার্ম কেইস। আমরা নিশ্চিত না সমসাময়িক সময়ে যারা মারা গেছেন তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না। আমাদের কেইস শনাক্তে আরও জোর দিতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই মানুষের কাছে এর তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে হবে। এর লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা যে কয়টা সার্ভিলেন্স কাজ পরিচালনা করি তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে নিপাহ সার্ভিলেন্স। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিপাহ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছি। আমরা জ্বর ও খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাসে আটকে আছি। মালয়েশিয়া ও ভারতের কারণের সাথে আমাদের মিল নেই। লক্ষণীয় বিষয় খেজুরের রস নেই এমন দেশেও নিপাহ সংক্রমণ ঘটছে। অর্থাৎ অন্য সোর্স থেকেও ঘটছে। তবে আমাদের দেশে এখনও তা পাওয়া যায়নি। কিন্তু হতে পারে না, তেমন নয়।

তিনি আরও বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই দ্রুত শনাক্ত হলেই বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আর যারা বেঁচে যান তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। তারা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অর্থাৎ প্রতিরোধ ছাড়া নিপাহ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আমরা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হই। নিজে না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও যখন রস উৎসব বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে থাকি তখন ঠিকই খাচ্ছি। এটি বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

হাসপাতালে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিপাহ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে চায় না। কেননা সেবাদানকারী ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় হাসপাতাল শাখাকে বলব সকল হাসপাতালে চিঠির মাধ্যমে একটি ওয়ার্ড ডেডিকেটেড করা। যেন রোগীকে আইসোলেটেড করা যায়। আমরা করোনার সময় পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছি। আমরা তা অনুসরণ করতে পারি।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল ছাড়া প্রতিবছরই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে কোনো না কোনো জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয় ২০০৪ সালে। ওই বছর ৬৭ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

টিআই/কেএ