ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর রেকর্ডও হচ্ছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে যখন আইসিইউ শয্যার জন্য তীব্র হাহাকার, তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে আইসিইউর সঙ্গে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা যুক্ত করে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আইসিইউ শয্যা আড়াইগুণ দেখানো হয়েছে। যদিও আক্রান্তদের স্বজনরা বলছেন, ঢাকায় করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীর জন্য প্রয়োজন হলেই একটি আইসিইউ শয্যা পাওয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ১৭টি বেসরকারি হাসপাতালে (করোনার জন্য নির্ধারিত বা করোনা ইউনিট রয়েছে) ৪৪৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৪৩৭টিতেই রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। সেখানে আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা সংযুক্ত শয্যাকেও আইসিইউর সমতুল্য ধরে একত্রে দেখানো হয়েছে। কতটি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে, সেটি বৃহস্পতিবার আলাদা করে দেখানো হয়নি। তবে আইসিইউর সমতুল্য হিসেবে পূর্বের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ বেশি শয্যা দেখানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার করোনা বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪১টি হাসপাতালে আইসিইউ সমতুল্যসহ মোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা রয়েছে এক হাজার ২৪৩টি। আগের দিনের (১৪ এপ্রিল) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৪৯৯টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৪৮৭টিতে রোগী ভর্তি আছে। সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি হাসপাতালে সাতটিসহ মোট আইসিইউ শয্যা খালি ছিল ১২টি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকালের (বৃহস্পতিবার) বিজ্ঞপ্তিতে আইসিইউর সংখ্যাটা বেড়েছে। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা যুক্ত শয্যাকেও আইসিইউ শয্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আইসিইউর একটি প্রধান সাপোর্ট হলো অক্সিজেন দেওয়া। যেহেতু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা দিয়েই আইসিইউর মতো সাপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে, এজন্য আইসিইউর পাশাপাশি এগুলোকেও আইসিইউ শয্যা সংখ্যা হিসেবে গণনা করা হয়েছে।

হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা প্রকৃত অর্থে আইসিইউ কি না বা এতদিন কেন দেখানো হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা পদ্ধতি বা ধারণা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এটার অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধন হচ্ছে। আগে আইসিইউ মানে একেবারে আর্টিফিশিয়াল ভ্যান্টিলেশন দিয়ে যেটা দেওয়া হয়, সেভাবে বলা হতো। এখন যেহেতু রোগীর শুধু অক্সিজেন ক্রাইসিসটাই অনেক বেশি এবং হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা দিয়েই তাকে সাপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে। সেজন্য এটাকেও আইসিইউ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত আইসিইউ এবং কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন থাকা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু। মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের। তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। আর জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে। তীব্র উপসর্গ ও জটিল রোগীদের প্রায় সবার এবং মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জটিল প্রায় সব রোগীর আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি ভেন্টিলেশন দরকার হয়।

উচ্চবিত্তদের জন্য আইসিইউ শয্যা পাওয়া যতটা না কষ্টকর, সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্তদের জন্য সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা সঙ্কট আরও প্রকট বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

ঢাকার আব্দুল খালেক নামের এক ব্যক্তি জানান, দুদিন আগে তার মায়ের জন্য একটি আইসিইউ বেড জোগাড় করতে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১০টি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হয়েছে। অবশেষে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা হয়।

তিনি বলেন, আমার মা কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে যাওয়ায় তার আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওখানে (কুর্মিটোলা) বেড খালি নেই। তখন বিভিন্ন জায়গায় কল দেই। সরাসরি কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েও খোঁজ করি। কিন্তু কোথাও বেড পাওয়া যাচ্ছিল না।

১৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল এক লাখ

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ১৯২ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখী সংক্রমণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ। মার্চে এসে এর প্রকোপ আরও তীব্র হয়। এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়ায়। আর এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ বেড়েছে।

এছাড়াও দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে একদিনে করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮১ জনে।

টিআই/এসএসএইচ