ভিসি ডা. শারফুদ্দিনকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
ঢাকা পোস্টে গত ২০ জানুয়ারি ‘সন্তান-পুত্রবধূকে সুবিধা দিতে কী না করছেন ভিসি শারফুদ্দিন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২১ মে) বিএসএমএমইউ-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে প্রকাশিত সংবাদটি পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এতে বলা হয়েছে, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ঢাকা পোস্টের সংবাদটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি সঠিক নয়। সংবাদটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকাশিত সংবাদটি মনগড়া ও অসত্য। অস্থিতিশীল করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে স্বার্থানেষী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। অস্থিতিশীল করার অংশ হিসেবে সারা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষার উচ্চতর কোর্স এমডি ও এমএস রেসিডেন্সি কোর্সকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সফল কাডাভারিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, শিশু কিডনি প্রতিস্থাপন, জোড়া শিশু আলাদ ও টেস্ট টিউব বেবি’র জন্ম দেওয়ার মতো সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা, মানসম্মত মেডিকেল উচ্চ শিক্ষার প্রসার, উন্নত ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে চলছে। প্রকাশিত সংবাদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা
বিজ্ঞাপন
প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশের চিকিৎসকরা দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্সি কোর্সের ভর্তির জন্য চিকিৎসকদের সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে হয়। আবেদনের শর্ত পূরণ-সাপেক্ষে চিকিৎসকদের এমডি/এমএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, উচ্চ শিক্ষা চিকিৎসকদের একটি অধিকার। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিয়মিত চিকিৎসকদের পরীক্ষার দেওয়ার অধিকার দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত মতে ‘বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে চাকরিরত চিকিৎসকদের জন্য রেসিডেন্সি (এমডি ও এমএস ফেইজ-এ, ফেইজ-বি)/নন-রেসিডেন্সি (এমফিল, এমপিএইচ, এমএড এবং ডিপ্লোমা) সব কোর্সের ক্ষেত্রেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বয়সসীমা ৫২ বছর করার বিষয়টি অনুমোদিত হলো। উল্লেখ্য, সরকারি প্রার্থীরা প্রেষণ নীতিমালা অনুযায়ী একটি কোর্স সম্পন্নের পর ১ বছর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরি সম্পন্ন হলে উচ্চতর কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু, বিএসএমএমইউ এবং প্রাইভেট প্রার্থীরা একটি কোর্স সম্পন্নের পরেই উচ্চতর কোর্সে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।’
উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিয়মিত চিকিৎসকদের পরীক্ষার দেওয়ার অধিকার দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত সংবাদের একটি জায়গায় বলা হয়েছে, ‘উপাচার্যের বড় ছেলে বাবার ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি পাওয়ার পর পাঁচ বছরের শিক্ষাছুটি নিয়ে জাপানে চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে যোগ দিয়ে পুনরায় চার বছরের শিক্ষাছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো যান, যা নজিরবিহীন।’ তথ্যটি একেবারে ভিত্তিহীন। ২০১৩ সালে উপাচার্যের বড় ছেলে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পান। ২০১৭ সালে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিক্ষাছুটিতে জাপানে পিএইচডি করতে যান। তিনি শিক্ষাছুটিতে জাপানে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করেন এবং পরে তিনি ১৫ মার্চ ২০২৩ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে আমেরিকার স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। যা আপনার প্রকাশিত সংবাদে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি।
দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এবং উপাচার্যের মেয়াদের শেষদিকে টাকার বিনিময়ে একটি সুনির্দিষ্ট চক্রের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার সংবাদভিত্তিক জাতীয় অনলাইনসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
আলোচ্য প্রতিবেদনটিতে উঠে আসা তথ্য ও বক্তব্য কোনোভাবেই প্রতিবেদকের মনগড়া নয়। বরং বিএসএমএমইউ উপাচার্যের বিরুদ্ধে ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের হাতে আসা বিভিন্ন অভিযোগসংবলিত দলিল-প্রমাণসহ সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে এমডি-এমএস কোর্সে ভর্তিতে দুই বছর চাকরির শর্ত কোনো একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভর্তির বিজ্ঞপ্তি থেকে উধাও করে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি উপস্থাপিত ‘অভিযোগ’ সত্য। কেবল অভিযোগ এসেছে- এটাই বলা হয়েছে। সুতরাং আলোচ্য সংবাদটির কোনো বক্তব্য ‘রিপোর্টারের মনগড়া’ নয়।
টিআই/জেডএস