বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়া সেই শিশুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে একসময় যারা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছিল, পরবর্তীতে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়া সেই শিশুরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ উপস্থিত অতিথিদের নাচ-গান ও আবৃত্তি শুনিয়েছে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আয়োজনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে শ্রবণ প্রতিবন্ধী থেকে শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়া ৪০ জন শিশু নাচ-গানসহ স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে। একইসঙ্গে তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। এসময় শিশুদের প্রত্যেকেই কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে কানে শোনার সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি, বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এইইচএম জহুরুল হক। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনি লাল আইচ লিটু।

অনুষ্ঠানে ডা. দিপু মনি বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। এখানে প্রতিবছর ভালো একটি বরাদ্দ থাকে, যা প্রত্যেকটি সেন্টারে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয়। দেশে এখন পর্যন্ত যতো কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট হয়েছে, তার মানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুবই কম হয়েছে। অধিকাংশই হয়েছে সরকারের সহযোগিতায়, অর্থাৎ তাদের পিতামাতার পক্ষে সেই খরচটা বহন করার মতো সামর্থ্য ছিল না।

তিনি বলেন, সরকারের সমাজসেবামূলক একটি কার্যক্রম। এই কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে জন্মগত বধির শিশুদেরকে সমাজে একজন সক্ষম স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তৈরির সুযোগ। সরকার এটি সবসময় করে যাবে।

মন্ত্রী বলেন, সবার পক্ষ থেকে একটি দাবি এসেছে যে, কক্লিয়ার ডিভাইসটি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে সেটির রিপ্লেসমেন্ট খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ফলে পরিবারের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে আলাদা একটি ফান্ড হতে পারে, যেখান থেকে রোগীর পরিবারকে কক্লিয়ার ডিভাইস রিপ্লেসমেন্ট করা যেতে পারে। যদিও এটি পুরোপুরি সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যদি একটু সুবিধা করে দেয়, তারপরও রোগীদের পক্ষ থেকে কিছুটা খরচ বহন করতে হবে।

দিপু মনি আরও বলেন, যেসব পরিবারের একেবারেই সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য কোন একটা ফান্ড হতে পারে। পুরোটা যদি সরকার করে, তাহলে কিন্তু ডিভাইসের যত্নের ওপর কারও নজর থাকে না। এমনকি সবসময় সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া, এটাও বোধহয় ভালো কোনো রীতি নয়। যার যতটুকু সক্ষমতা আছে, ততটুকু বহর করবে। আর যার একেবারেই নেই, তার পাশে অবশ্যই রাষ্ট্র থাকবে।

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, বিদেশি সার্জনের মাধ্যমে ২০০৫ সালে দেশে প্রথম কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শুরু হয়। এর আগে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হয় ১৯৮৫ সালের দিকে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতে শুরু হয় ১৯৯৫ সালের দিকে। বর্তমানে  বিশ্বে চারটি কোম্পানি মানসম্পন্ন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করে। তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা- এ তিন দেশের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, গবেষণা জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৮% হেয়ারিং লস আছে। তাদের মধ্য থেকে দেশে আমরা এখন পর্যন্ত ২ হাজার রোগীর অপারেশন করেছি। একটি বেসিক মডেলের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের গড় মূল্য দাঁড়ায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। উচ্চতর মডেলের ক্ষেত্রে এর মূল্য ২০-৩০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এই মূল্য আমাদের মতো দেশে বেশিরভাগ পরিবারেরই নাগালের বাইরে হওয়ায় সরকারি সহযোগিতায় নামমাত্র মূল্যে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

টিআই/এসকেডি