রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল করোনায় আক্রান্তদের প্রথম পছন্দ। মানসম্মত সেবা, চিকিৎসক-নার্সদের আন্তরিকতা রোগীদের এ হাসপাতালে ভর্তি হতে উৎসাহিত করত। আবার রোগীর অবস্থা খারাপ হলে মিলবে আইসিইউ। এসব কারণে করোনায় আক্রান্তদের প্রথম পছন্দ এ হাসপাতাল।

মার্চের শেষ সপ্তাহ ও এপ্রিলের ১৮ তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যা সংখ্যার বাইরেও প্রায় দ্বিগুণ রোগী এসে ভর্তি হয়। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে করোনা ডেডিকেটেড এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমছে। 

শনিবার (২৪ এপ্রিল) সরজমিনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনার রোগীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে আগের মত ভিড় নেই। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। তবে কয়েকজন রোগী এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।   

রোগীর সংখ্যা কেন কমছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে না জানাত পারেননি হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল উদ্বোধনের পর থেকেই এখানে রোগী আসার হার কমেছে। রোগীরা হয়তো মনে করছেন, ডিএনসিসি হাসপাতালে আইসিইউ বেড বেশি হওয়ায় সেখানে এরচেয়ে ভাল সেবা পাবেন। 

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা কমছে। তাই রোগী ভর্তি সংখ্যাও কমেছে। 

হাসপাতালের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গেল বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এ হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১৪ জন। ১০টি আইসিইউর মধ্যে সবগুলোতে রোগী ছিল। ঐদিন ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ও ৩৬ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন। 

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রোগীর সংখ্যা ছিল ২৮৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয় ১৫ জন। আর ছাড়পত্র নিয়েছে বাসায় গেছেন ২৭ জন।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন এবং ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ২০ জন।

গত তিন দিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিদিনই ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা কমছে। আবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সংখ্যা বাড়ছে।

তবে সাধারণ রোগী ভর্তি কমলেও আইসিইউর চাহিদা এখনো কমেনি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, কুর্মিটোলা হাসপাতালের আইসিইউ বেড আছে ১০টি। কিন্তু প্রতিনিয়ত ফোন আসে আইসিইউ ফাঁকা আছে কি না।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা আজিজুর ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা কমছে। 

তার মতে, মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি করোনা হাসপাতাল চালুর পর রোগীর চাপ কমছে। তাছাড়া আগে রোগীরা মনে করত কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হলে আইসিইউ পাওয়া যাবে। এখন মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল চালু হওয়ার পর সেখানে পর্যাপ্ত আইসিইউ থাকায় রোগীরা ওই হাসপাতালে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. আশেক আলী জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ২১৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে সেবা নিয়েছেন। সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছেন ২৭৭ জন। আইসিইউতে মোট ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছেন ৪৯০ জন। বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি আছে ১০ জন। করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন ৪৮৭ জন।

এনএম/ওএফ