‘পেটে খেলে পিঠে সয়’—যুগযুগ ধরে চলে আসা এই প্রবাদ আজ ও আগামীতে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশুর বয়স ছয় মাস হলেই একটু একটু করে স্বাভাবিক খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। সেই সময় থেকেই সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। শরীর গঠন হবে। বুদ্ধিতে হবে চৌকস। স্নায়ু হবে সতেজ-চনমনে।

বাড়ন্ত বাচ্চার দরকার সঠিক পুষ্টি। যা খুব সহজেই পাওয়া যায় দৈনন্দিন খাবার থেকে। শিশুর জীবনের প্রথম পাঁচ বছরেই শরীরের ওজন বাড়ে। বাড়ে বুদ্ধিমত্তা। আবার শরীর ও মননের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সতেজ স্নায়ু। আসল কথা সঠিক খাবার শরীর মন এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির চাবিকাঠি। সঠিকভাবে সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে উঠলে রোগ বালাই শরীরে বাসা বাঁধে না। ওষুধও কম খেতে হয়। আর এমন সন্তান কে না চায়। সঠিক পুষ্টির অভাবে শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। সবচেয়ে বেশি কাবু হয় মস্তিষ্ক। বলা ভালো, স্নায়বিক নানা ত্রুটির কারণ হতে পারে অপুষ্টি।

ভিটামিনের অভাব
অপরিমিত ভিটামিন থেকে বিভিন্ন রকমের স্নায়ুরোগ বাসা বাঁধে। পরিমিত ভিটামিন খাদ্যের মধ্যে না গ্রহণ করলে শিশু অবস্থা থেকেই কিন্তু কিছু স্নায়ুরোগের লক্ষণ দেখা যেতে পারে এবং পরবর্তীকালে সেগুলো চিকিৎসা করলেও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যে সব ভিটামিনের কারণে স্নায়ুরোগ হয়। সেগুলো হলো ভিটামিন– বি ১, বি ৩, বি ৬, বি ৯, বি ১২, ভিটামিন সি, ই, এ, ইত্যাদি। এসব ভিটামিন অপরিমিত গ্রহণ করার কারণে যে সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো স্নায়ু দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, হাঁটাচলা করতে অসুবিধা, রক্তের অসুখ এবং চোখের সমস্যাও হতে পারে।

ভিটামিন বি ১ (থিয়ামাইন) : থিয়ামিন এমন একটি ভিটামিন যেটি আমরা মাছ, মাংস, চাল এবং দানাশস্যের মধ্যে পাই। এই ভিটামিন অপরিমিত থাকলে শিশুমস্তিষ্কের নিউরোন কোষগুলো ঠিক মতো তৈরি হয় না, আবার কিছু ক্ষেত্রে বিশেষত সেই সব শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হলে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে বা খাদ্য হজম না হলে কিন্তু এই সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে। ভিটামিন বি১ কম থাকার কারণে, খিঁচুনি, চোখের সমস্যা, কোনো কিছু মনে না রাখতে পারা, চলাফেরা করতে গিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়া মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। ভিটামিন বি১ কম থাকাকে বেরিবেরি রোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

নিয়েসিন বি ৩ : সাধারণত খাদ্যের মাধ্যমে বি ৩ সরবরাহ হয়, মাছ, মাংস, লেবু ও দানাশস্য থেকে। অপরিমিত গ্রহণ করার কারণে পেল্লাগ্র নামক রোগ হতে পারে। এই রোগের লক্ষণ হলো ঘুম না হওয়া, মানসিক অস্থিরতা, মনে রাখতে না পারা, মাংসপেশির দুর্বলতা।

বি৬ পাইরিডক্সিন : বি৬ কম থাকার কারণে স্নায়ুসমস্যা ছাড়াও দেহের চামড়া, চোখে এবং প্লীহার সমস্যা হতে পারে। যা থেকে খিঁচুনি, রক্তের সমস্যা, চামড়ার অসুখ প্রকাশ পায়। গর্ভাবস্থায় বি৬ কম থাকলে শিশুর জন্মানোর পর মাথার খিঁচুনি হতে পারে। মাছ, মাংস, বাদাম জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করলে এই সমস্যা হয়। এছাড়া অ্যালকোহল বা কোনো ওষুধ যেমন আইসোনিয়াজিড জাতীয় ওষুধ নিলে একই রকম সমস্যা হতে পারে।

বি৯ ফোলেট : ফল, সবুজ সাক সবজি কম গ্রহণ করলে এই ভিটামিনের অভাব হয়। এ থেকে সাধারণত বি১২ ডেফিসিয়েন্সিতে যা সমস্যা হয় তাই হতে পারে। স্নায়ু বিকল, মনে রাখতে না পারা, হাত-পা অবশের মতো বিরল রোগ হতে পারে।

কোবালামিন বি১২ : উপরের সমস্যাগুলো কিন্তু বি১২ ডেফিসিয়েন্সি হলেও হতে পারে।

ভিটামিন এ : অপরিমিত গ্রহণ করলে চোখের সমস্যার সঙ্গে কিছু স্নায়ু সমস্যা হতে পারে, যেমন খিঁচুনি, মাথা ঘোরা, স্মৃতিশক্তির অভাব দেখা দেয়।

ভিটামিন সি : কম গ্রহণ করলে হাত-পা অবশ, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, মাংসপেশি অবশ হতে পারে।

ভিটামিন ই : যার অভাবে স্নায়ু দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, হাত-পা কাঁপা শুরু হয়। এই ভিটামিন ই অনেক সময়ই ক্যানসার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিসের মতো রোগের প্রদুর্ভাব কমাতে পারে।

কাজেই শিশুর জন্মের সময় থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত এই ভিটামিনের অভাব যেন না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন.ইন

এসএম