চৈত্রের গরমে নাকাল জনজীবন। ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। সুস্থ মানুষের কাছে অস্বস্তিকর এ অবস্থা রোগীদের কাছে আরো যন্ত্রণার। প্রকৃতির গরমে হাসপাতালের  ওয়ার্ডের বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও গরম হয়ে উঠেছে। তাই স্বস্তি পেতে শয্যা ছেড়ে মাঝে মাঝেই বাইরে আসছেন রোগীরা। তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরাও বাইরে এসে স্বস্তির বাতাস নিচ্ছেন। রোগীরা বলছেন, রোগ নিয়ে বাঁচা গেলেও অসহ্য গরমে প্রাণ যেন যায় যায়।

রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালী ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ঘুরে রোগীদের এ চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে ভর্তি মো. রফিকুল ইসলাম। ওয়ার্ডে প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই পেতে হাসপাতালের বাইরে এসে চেয়ারে বসেছেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে রফিকুল ইসলাম বলেন, বাইরে এসে বসলে কিছুটা শান্তির বাতাস মিলে। রুমের ভেতরে সারাক্ষণ ফ্যান চললেও বাতাস গরম লাগে। বাতাসের মধ্যেও শরীর ঘামে। তাই যখনই সুযোগ পাই বাইরে এসে বসি।

তিনি বলেন, আমি না হয় সুস্থ মানুষ, তাই বাইরে চলে আসতে পারি। কিন্তু রোগীকে তো আনা সম্ভব হয় না। যে কারণে অসহ্য গরমে রোগীদের বেশি কষ্ট করতে হয়।

ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলার নারী ওয়ার্ডে গিয়েও দেখা গেলো একই চিত্র। একটি রুমে সর্বমোট ৮টি ফ্যান একসঙ্গে ঘুরলেও স্বস্তি নেই রোগী ও তাদের স্বজনদের। একটু শান্তির খোঁজে কেউ গিয়ে বসে আছেন হাসপাতালের বাইরের সিঁড়িতে, আবার কেউ বসে আছেন দুই ভবনের সংযোগ পথের মাঝামাঝিতে।

নোয়াখালী মাইজদী এলাকা থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বশির আহমেদ। হাসপাতালের ওয়ার্ড ছেড়ে রোগী নিয়ে বাইরে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেতরে এমনিতেই প্রচণ্ড গরম, এর মধ্যে আবার আবহাওয়ার গরমে খুবই খারাপ অবস্থা তার। গরম বাতাসে শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়। এখানে বসলে বাইরের বাসাত আসে, একটু শান্তি পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের একটা ওয়ার্ডে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোগী। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আরও আত্মীয় স্বজন। সবমিলিয়ে ভেতরটা যেন গরমে পুড়ছে। দিনের বেলায় বাইরে বসে থাকা গেলেও রাতে আর আসার উপায় থাকে না।

কুমিল্লা থেকে ক্যান্সার হাসপাতালে এসে সিট না পেয়ে গত ৭ দিন ধরে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন মজিদা বেগম। তিনি বলেন, সাতদিন ধরে বারান্দায় পড়ে আছি, কোনো সিট নাই। রাতে অনেক গরম লাগে, কিন্তু লাগলেও কী করা যাবে? এভাবেই পড়ে আছি।

মজিদা বেগম আরও বলেন, বাইরে এলে একটু বাতাস লাগে, বারান্দায় রোদ থাকে, বাতাসও লাগে না। তাই দিনের বেলায় বাইরে এসে বসে থাকি। ফুসফুস থেকে গলায় ক্যান্সার ছড়াইছে, এমনিতেই কষ্ট। এরমধ্যে আবার গরমের কষ্ট। এতকিছু নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যান্সার হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বাইরেও প্রচুর রোগী হাসপাতালের বারান্দায় থাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নেওয়ার জন্য। গরমে ভেতরের রোগীদের যেমন কষ্ট হয়, বাইরের রোগীদেরও কষ্ট হয়, কিছুই করার নেই। আমরা যারা এখানে ডিউটি করি, আমাদের আলাদা কোনো এসি রুম নেই। সুতরাং রোগীদের মতো আমাদেরও গরমে কষ্ট হয়, এভাবেই কাজ করতে হয়।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরমের তীব্রতার কারণে রোগীদের একটু সমস্যা হচ্ছে, তবে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ডেই পর্যাপ্ত ফ্যান আছে, সবগুলোই মোটামুটি সার্বক্ষণিক চলে। কোনটায় কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে দেওয়া হয়। যে কারণে খুব বেশি সমস্যা আমাদের হচ্ছে না।

তিনি জানান, রোজার মাস আর আসন্ন ঈদের কারণে হাসপাতালে আপাতত রোগীর সংখ্যা অনেক কম। যে কারণে গরমটাও কম। যেখানে অন্যান্য সময় হাসপাতালে রোগী থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ জন, সেখানে বর্তমানে আছি ৪০০ জনের মতো রোগী।

টিআই/জেডএস