সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। অপেক্ষা মৃত যাত্রীর। স্বজনদের ব্যস্ততা হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার। কেউ কেউ ফোনে আত্মীয় স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ জানাচ্ছেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। হয়তো মোবাইলের অপরপ্রান্তে থাকা মানুষটিও কাঁদছেন একইভাবে।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের সামনের চিত্র এটি। কোনো কোনো স্বজনের কান্না যেন শুকিয়ে গেছে। কেউবা কাঁদতেই পারছেন না, দম বন্ধ অবস্থা। সুস্থ করার আশায় প্রিয়জনকে নিয়ে হাসপাতালে আসা মানুষগুলো ফিরছেন লাশ নিয়ে।

আরও পড়ুন : মৃতদের ৪৮ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিনের মধ্যে মারা যায়

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে হাসপাতালটিতে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আসাদুজ্জামানের কণ্ঠে পাওয়া গেল নানা চেষ্টার পরও হেরে যাওয়ার কষ্ট।

রোগীদের আমরা কোনো সহযোগিতাই করতে পারছি না উল্লেখ করে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পরপরই মারা যাচ্ছেন অধিকাংশ রোগী। রোগীরা আসছেন আর মারা যাচ্ছেন! গত কয়েক মাসে মৃত্যুর হারের তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। এবার খুব বেশি সহযোগিতা করতে পারছি না রোগীদের। তার আগেই মারা যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, আমরা এ বছর কিছু নতুন জিনিস দেখতে পাচ্ছি যা গত এক বছর দেখতে পাইনি। সম্প্রতি কোভিড আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার পরিমাণটা কমছে না বরং বাড়ছে। এ বিষয়ে কিছু মানুষের জেনেটিক সমস্যা থাকে। গত এক বছর কিছু রোগী পেয়েছি তাদের জেনেটিক সমস্যা হিসেবেই ধরে নিয়েছি। কিন্তু চলতি বছর এ সংখ্যাটা অত্যধিক বেশি। যা এখন জেনেটিক হিসেবে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন : একজনের মৃত্যুর অপেক্ষায় দুজন আইসিইউ প্রত্যাশী

এ চিকিৎসক জানান, দেখা যাচ্ছে, আইসিইউতে ১০ জন রোগী ভর্তি হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কমপক্ষে চারজন মারা যাচ্ছেন। কোভিড রোগীদের মূল ভরসা হলো অক্সিজেন। যেসব রোগীর অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্ট পেতে দেরি হয়েছে তাদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

উদাহরণ দিয়ে ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, গত সপ্তাহে এখানে একটা বেড খালি ছিল। কিন্তু এই একটা বেডে চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তিনজনই মারা গেছেন। একজন মারা গেছেন তার জায়গায় আরেকজন এসেছেন, তিনিও মারা গেছেন। এরপর আরেকজন ভর্তি হয়েছেন, তিনিও মারা গেছেন। একটি বেডেই পরপর মারা গেছেন তিন রোগী। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই বয়স ৬০ এর বেশি।

উল্লেখ্য, কোভিড ডেডিকেটেড এ হাসপাতালে গত মাসে (মার্চ) আইসিইউতে মোট রোগী ভর্তি হন ৫৪ জন। এর মধ্যে ২৬ জনই মারা যান।

একে/এসকেডি/জেএস