বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 

রোববার (২ মে) ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট অনলাইনে আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার বক্তারা এ কথা বলেন।

তারা বলেন, জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে যা সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই সমন্বয় করবে এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এছাড়াও উক্ত সংস্থাটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিষমুক্ত খাদ্যের যোগান, নগরকৃষি, হাঁটা ও সাইকেলবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি, খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারি বা মহামারি নিয়ন্ত্রণেও তারা কাজ করতে পারে।

অনলাইন আলোচনায় যুক্ত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সহকারী আরবান প্ল্যানার সাদিয়া চৌধুরী, ভূমিজ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ অপারেশন অফিসার স্থপতি মাসুদুল ইসলাম এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশের পলিসি অফিসার আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঞা প্রমুখ।

সাদিয়া চৌধুরী বলেন, নগর পরিকল্পনার সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। নগর পরিকল্পনায় হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাঁটা দূরত্বে সকল নাগরিক সেবা প্রাপ্তি, শহরে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে নগরবাসীর কায়িক পরিশ্রম ও সামাজিকীকরণের চাহিদা পূরণ সম্ভব। সুন্দর ও নিরাপদ হাঁটার পরিবেশ ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতাও কমিয়ে আনবে। ফলে দূষণ কমে যাবে বহুলাংশে। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

স্থপতি মাসুদুল ইসলাম বলেন, গণপরিসরের চাহিদা মেটানোর জন্য মাঠ-পার্ক উন্নয়নই যথেষ্ট নয়। লক্ষ্য রাখতে হবে এগুলো যেন সামাজিক ও অবকাঠামোগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। রাস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর। এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জন্য সামাজিকীকরণের সুযোগ করে দেওয়া যায়। একই সঙ্গে ফুটপাতগুলো নগরকৃষির জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের সড়ক বিভাজিকাগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের গাছের পরিবর্তে আমরা ফলজ গাছ রোপণ করতে পারি। এর মাধ্যমে মানুষের ফলের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। সুযোগ পেলে তরুণরাও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবেন।

মাছুম বিল্লাহ ভূঞা বলেন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাষ্ট্রের ওপর সব দায়িত্ব না চাপিয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জিনিসগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন এ অর্থ শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ব্যয় না করে সত্যিকার অর্থেই স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় হয়। অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদাহরণ অনুযায়ী, বাংলাদেশেও ‘একটি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’র মতো সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধের জন্য মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উন্নতির দিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে।

এমএইচএন/এইচকে