করোনাভাইরাস আমাদের জীবনে অনেক বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো স্বাস্থ্যঝুঁকি। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনের দুটি পথ আছে। একটি হচ্ছে হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করা। আরেকটি হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা, তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করা। ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের এখন এসব দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

সোমবার (১০ মে) অনলাইনে ‘দি হাঙার প্রজেক্ট বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় দি হাঙার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দি হাঙার প্রজেক্টের ‘করোনাভাইরাস- সহিষ্ণু গ্রাম’ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছর এপ্রিলে। স্বেচ্ছাব্রতীরা চারটি ধাপে এই উদ্যোগ পরিচালনা করেন। প্রথম ধাপে স্বেচ্ছাব্রতীরা কমিউনিটি মোবিলাইজেশন কমিটি গঠন করার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন, দ্বিতীয় ধাপে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও আচরণগত পরিবর্তন আনার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন, তৃতীয় ধাপে আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা পেতে সহায়তা করেন এবং চতুর্থ ধাপে স্বেচ্ছাব্রতীরা বিপন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

‘করোনাভাইরাস- সহিষ্ণু গ্রাম’ উদ্যোগের কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে প্রায় ১২০০ গ্রামে ১২৯টি ইউনিয়ন কমিটি দ্বারা এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কর্মরত ৫৯৬টি গ্রামের ১৮ হাজার ৬৮৬ জন কোভিড পরীক্ষা জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় ২ হাজার ৩০২ জনের পজিটিভ আসে। ১ হাজার ৬১৯ জনকে নিজেদের ঘরে আইসোলেশনে রাখতে সহায়তা করা হয়। অবশিষ্ট ৯২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে পাঠানো হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ১৯৯৭ জন এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালটেন্ট তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিস্ক কমিউনিকেশন এবং কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট গাইডলাইন পড়ে আমার মনে হতো এটা কি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব? আমার মনে হতো, কমিউনিটিকে ব্যবহার করে আমরা বিশ্বের সামনে রোল মডেল কেন হতে পারছি না? এটা এমন একটা সুযোগ সেটাকে আমরা হেলায় হারাচ্ছিলাম। কিন্তু আজকের আলোচনা শুনে আমি মুগ্ধ। এই উদ্যোগ যদি বিশ্বের সামনে তুলে ধরা না যায় তাহলে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য হবে। আমরা যুগ যুগ ধরে নানা এনজিওর মাধ্যমে কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্টের কাজ করে গিয়েছি, তার মধ্যেও এটি অসাধারণ উদ্যোগ। কারণ মহামারি পরিস্থির মধ্যে এ রকম উদ্যোগ সত্যিই অনন্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, হাঙার প্রজেক্টের স্বেচ্ছাব্রতীরা এমন একটি কাজ করছেন যা জাতির জন্য গর্বের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকে যেটা বলে আসছে সেটা হল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট, আরেকটা হলো সচেতনতা সৃষ্টি। হাঙার প্রজেক্ট যে কমিউনিটি সম্পৃক্ত করেছে এটা একটি আদর্শ উদ্যোগ। এই উদ্যোগ যদি সফল হয় তাহলে বাংলাদেশ একদিন করোনামুক্ত হবে।

সভায় আরও যুক্ত ছিলেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা প্রফেসর নজরুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক জ ই মামুন, এনজিও এফেয়ার্স ব্যুরোর ডিজি রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি/জেএস