রোগী আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। কিন্তু রোগীর রক্তচাপ, ইসিজি রিপোর্টসহ রোগ বালাইয়ের যাবতীয় তথ্য দ্রুত চলে যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। মিনিট দশকের মধ্যে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন চিকিৎসক।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীর এ দূরত্ব কমিয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এ সেবা নিয়ে অনেক খুশি রাবেয়া আক্তার। তাকে আর কষ্ট করে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে হয় না।

শুধু সাতক্ষীরা নয়, রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামসহ সবখানে স্বাস্থ্যসেবায় এভাবেই আলো ছড়াচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা। কেউ মোবাইল ফোনে, কেউবা ভিডিও কলে চিকিৎসকের সেবা দ্রুত সময়ে পাচ্ছেন। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় অন্যতম ভরসা আর আস্থার জায়গা করে নিয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। করোনাকালে টেলিমেডিসিন সেবাটির কদর আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্যোগে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়। শুধু ভিডিও বা সরাসরি কল নয় এ বিভাগের নিজস্ব উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর থেকে রোগীর ইসিজি, হৃৎস্পন্দন, ফুসফুসের শব্দ, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপও সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুন : রোগীর ভোগান্তি দূর করবে ডক্টরস গ্যাং

ঢাবির টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের সমন্বয়ক এম এ ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে ইউনিয়ন, উপজেলায় ও গ্রামে চিকিৎসকের অভাব দেখা দেয়। আমরা এসব বিষয় বিবেচনায় এনে টেলিমেডিসিন সেবাটি চালু করি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার রোগীকে সরাসরি টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগেও টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন বলেন, এ সেবার মাধ্যমে তৃণমূলের রোগীরা গ্রাম থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : রাজধানীতে টেলিমেডিসিন সেবা দেবে আ.লীগের ৩১ চিকিৎসক

করোনাকালে এ সেবা অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে রোগীদের কাজে লাগছে উল্লেখ করে পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ যাকী বলেন, শুধু যে ভিডিও কলেই টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে বিষয়টা তেমন নয়। প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন একটি করে হটলাইন নম্বর রয়েছে সেখানেও ফোন করে রোগীরা প্রাথমিক সেবা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, মূলত প্রাথমিক সেবা নেওয়ার জন্যে এখন আর রোগীকে হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে হচ্ছে না। এছাড়া কিছু রোগী আছেন যাদের ফলোআপ করার জন্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার হচ্ছে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে সেবাটি নিতে পারছেন। সবমিলে টেলিমেডিসিন এখন স্বাস্থ্যসেবায় অন্যতম ভরসা আর আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বর থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

একে/এসকেডি