করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই দেশে নতুন আতঙ্করূপে এসেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস (কালো ছত্রাক)। চলতি মাসেই রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে অন্তত ৩ জনের শরীরে এই রোগটি শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতাই রোগটি থেকে বাঁচাতে পারে। অন্যথায় রোগটির চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল, যা অনেকটাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

মঙ্গলবার (২৫ মে) ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের ধরন, উপসর্গ ও চিকিৎসা নিয়ে ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বারডেম জেনারেল হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম দেলোয়ার হোসেনের।

আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

রোগটির চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মিউকরমাইকোসিস রোধে অ্যান্টি ফাঙ্গাল রয়েছে, যা খুবই ব্যয়বহুল। পূর্বে বাংলাদেশে এই ওষুধ তৈরি হতো না। এখন তৈরি হলেও তাতে প্রতিদিন একজন রোগীর খরচ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। চিকিৎসায় সুস্থ হতে  কারও ৭ দিন থেকে শুরু করে ১৪ দিন বা কারও ছয় সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। একজন রোগীর চিকিৎসায় যদি প্রতিদিন ৭৫ হাজার টাকা লাগে এবং এভাবে তাকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বহন করতে হয়, তাহলে এই খরচ বহন করা অসম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের ব্যাপারে। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে, তারা রোগীদের সহযোগিতা করবেন।’

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?

এটি এক ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাক-জনিত রোগ। খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস যেহেতু দুর্বল থাকে, সেজন্য তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

কাদের এই রোগটি বেশি হয়? 

সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরই এই রোগটি বেশি হয়। বিশেষ করে যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে তাদেরও এই রোগের ঝুঁকি বেশি।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই রোগটি যে আজ নতুন হয়েছে তা নয়। এর আগেও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পাওয়া গিয়েছে এমনকি আমিও পেয়েছি। অর্থাৎ এই ফাঙ্গাসটি কিন্তু আমাদের পরিবেশেই আছে। এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, যেসব জায়গায় ছত্রাকের উপস্থিতি আছে সেসব জায়গা এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।

চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব ছত্রাকের কারণে মিউকোরমাইকোসিস হয় সেটা পরিবেশে থাকা খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন যাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়। 

কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়- সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, যেসব জায়গায় অনেক বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তাহলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা।

এছাড়াও শরীরের চামড়ায় যাতে কোনো ইনফেকশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোথাও কেটে গেলে কিংবা চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোগীর স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। বারডেম হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক স্টেরয়েডের ব্যবহার ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে পারে। ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। তবে এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেই যে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ এড়ানো যাবে সেটি এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত নয় বলেও জানিয়েছে সিডিসি।

টিআই/এইচকে