জরুরি স্ক্রিনিং ও সচেতনতার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ হারে বাড়ছে। গত সাত বছরে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা না হলে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রাজধানীর মালিবাগে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের আয়োজনে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে এক কর্মশালায় এই চিত্র তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।
বিজ্ঞাপন
থ্যালাসেমিয়ার ভয়াবহ চিত্র
ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ২০১৮ সালে দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭২৫ জন। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১১ জনে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্তও প্রতি বছর গড়ে এক হাজার করে নতুন রোগী বেড়েছে। এই হিসাব শুধু নিবন্ধিত রোগীদের; বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক, যা সংখ্যায় প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ। প্রতিবছর দেশে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজার।
রোগের কারণ ও লক্ষণ
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। মানব কোষে রক্ত তৈরির জন্য দুটি জিন থাকে। একটি জিনে ত্রুটি থাকলে ব্যক্তি ‘বাহক’ হন, কিন্তু দুটি জিনেই ত্রুটি থাকলে তিনি থ্যালাসেমিয়া রোগী হন। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো— ফ্যাকাশে ভাব, দুর্বলতা, ঘন ঘন সংক্রমণ, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ও শিশুর ওজন না বাড়া।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাবা-মা দুজনই যদি বাহক হন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হয়ে জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ। অথচ একজন বাহক ও একজন সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে সন্তান জন্মালে এই রোগ হয় না।
চিকিৎসা ও আর্থিক ব্যয়
ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় মাসে কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এই বাস্তবতায় ২০০২ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন চিকিৎসা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
করণীয় ও সুপারিশ
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য হলেও সচেতনতার অভাবে তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এই অবস্থায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা, বিয়ের আগে হবু স্বামী-স্ত্রীর থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা তা পরীক্ষার ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতা আনা, একটি কেন্দ্রীয় রোগী ডেটাবেইস তৈরি করা এবং রোগীদের সরকারি সহায়তায় চিকিৎসার আওতায় আনা এবং রক্তদান কার্যক্রমে তরুণদের যুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ও আগামীর পদক্ষেপ
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে আগামী ৮ মে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পালিত হবে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’। দিবস উপলক্ষ্যে ১০ মে মালিবাগে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন।
টিআই/এমজে