বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার প্রাণহানি
তামাক আইনের দ্রুত সংস্কারের আহ্বান ১৯ সংগঠনের
বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করছেন। জনস্বাস্থ্যের এই ভয়াবহ ক্ষতি ঠেকাতে এবং তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তামাকবিরোধী ১৯টি সংগঠনের নেতারা।
আজ (শনিবার) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা), এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বিসিসিপি, বিইআর, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ডাস, ডর্প, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস, নারী মৈত্রী, নাটাব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, পিপিআরসি, প্রত্যাশা, তাবিনাজ, টিসিআরসি, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এবং প্রজ্ঞা।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি তামাক কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় নানা ফাঁকফোকর রেখে তৈরি করা হয়েছে। এতে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিবর্তে কোম্পানিগুলোই লাভবান হচ্ছে, যা অবিলম্বে রোধ করা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে হচ্ছে এবং এসব রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। বক্তারা বলেন, “তামাক হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোকসহ অসংখ্য অসংক্রামক রোগের মূল চালক। অথচ এখনো দেশের ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে যাচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, “জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ছাড়া এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
বক্তারা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে এফসিটিসি-এর (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনী চূড়ান্তকরণের কাজ করছে।
খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো— সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (স্মোকিং জোন) বাতিল, তামাকজাত দ্রব্যের খুচরা বিক্রি ও খোলা বিক্রি নিষিদ্ধ, বিক্রয়স্থলে প্যাকেট বা তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্ব কমে যাওয়া, কর্মসংস্থান হারানো, ধূমপান বেড়ে যাওয়ার মতো অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে প্রথম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস এবং ২০১৩ সালের সংশোধনের পরও সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্মোকিং জোন পরোক্ষ ধূমপান রোধে কার্যকর নয় বলেই ইতোমধ্যে ৭৯টি দেশ এই ব্যবস্থাকে বাতিল করেছে। তরুণদের মধ্যে ভ্যাপিং আসক্তি ঠেকাতে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৪২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে এবং ১১৮টি দেশ খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করেছে।
আরও পড়ুন
বক্তারা বলেন, “ব্রাজিল, তুরস্কসহ যেসব দেশে কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে, সেখানে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) আহ্বায়ক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট লিটন হায়দার, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, ডরপ–এর উপনির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জোবায়ের হাসান এবং প্রত্যাশা–এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।
টিআই/এনএফ