কোভিড-১৯ কমপ্লিকেশনস ইনক্লুডিং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শীর্ষক সেমিনার

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশেরই অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কারও স্মৃতিশক্তি লোপ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়তে দেখা গেছে। তাছাড়া বর্তমানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনটাই বলছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

রোববার (১৩ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে ‘কোভিড-১৯ কমপ্লিকেশনস ইনক্লুডিং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত-এমন রোগীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতাও বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি যেমন জরুরি তেমনি জটিলতায় ভোগা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের পারস্পরিক জ্ঞানের আদান-প্রদান, অভিজ্ঞতা বিনিময়, নিরন্তর গবেষণা ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। তাই এ ধরনের সেমিনার- সিম্পোজিয়াম যত বেশি হবে, ততই দেশ ও বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ফলোআপ চিকিৎসার আওতায় থাকা উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট কোভিড ফলোআপ ক্লিনিক চালু রয়েছে। সেখানে কোভিড ১৯ পরবর্তী জটিলতাসমূহের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নাই জানিয়ে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, বাংলাদেশের করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। টিকা নেওয়া, পরিষ্কার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যারা ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতা, পালমোনারি এম্বলিজম, শরীর বা স্বাস্থ্য ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে মানসিক অবসাদ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ডায়রিয়া, তীব্র মাত্রার মানসিক সমস্যা, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা, হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগজনিত সমস্যা, কিডনি বিকল, ব্রেন স্ট্রোকজনিত নানা জটিলতা, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণজনিত জটিলতা ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী অনেক অজানা জটিলতাসমূহও ধরা পড়ছে। এ অবস্থায় রোগীদের জীবন বাঁচাতে দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। সেমিনারে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. তছলিম উদ্দিন, যুক্তরাজ্যের ইস্ট কেন্ট হসপিটালস ইউনিভার্সিটির নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাকেল।

অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী, কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রায়হান মাসুম মন্ডল।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অটোল্যারিংগোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ। সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল প্রমুখ।

টিআই/আরএইচ