বেক্সিমকো ফার্মার নতুন ওষুধ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস চিকিৎসায় নতুন আশা
বিশ্বজুড়ে বিরল জেনেটিক রোগ সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হাজারো মানুষের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্টেক্স ফার্মার ট্রিকাফটার বিকল্প হিসেবে কোম্পানিটি তৈরি করেছে জেনেরিক ওষুধ ‘ট্রিকো’, যার দাম মূল ওষুধের তুলনায় ৫৮ ভাগ কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিকভাবে ওষুধপ্রাপ্তির ন্যায্যতা ও মানবিক উদ্যোগের এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী জেনেটিক রোগ, যা ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ এই রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশের রোগ নির্ণয় হয় এবং চিকিৎসা পান মাত্র ২৭ শতাংশ রোগী।
এই রোগের চিকিৎসায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস উদ্ভাবিত ওষুধ ট্রিকাফটা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এতে ইলেক্সাকাফটার, টেজাকাফটার ও আইভাকাফটার—এই তিন উপাদান একত্রে ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর আয়ু ও জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। তবে এর বার্ষিক চিকিৎসা ব্যয় ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার—যা বেশিরভাগ রোগীর নাগালের বাইরে।
বিজ্ঞাপন
এই সীমাবদ্ধতা ভেঙে দিতে বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা তৈরি করেছে ট্রিকাফটার জেনেরিক সংস্করণ ‘ট্রিকো (Triko)’। এর বার্ষিক চিকিৎসা ব্যয় শিশুদের জন্য মাত্র ৬ হাজার ৩৭৫ ডলার এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১২ হাজার ৭৫০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ট্রিকাফটার মূল্যে একজন শিশুর চিকিৎসার খরচে ট্রিকো দিয়ে ৫৮ জন শিশুর চিকিৎসা সম্ভব।
২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত নর্থ আমেরিকান সিস্টিক ফাইব্রোসিস কনফারেন্সে সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত শিশুদের মায়েদের উদ্যোগে ‘কমিউনিটি পরিচালিত বায়ারস ক্লাব’-এর মাধ্যমে ট্রিকো রোগীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওষুধটি ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ সরবরাহ করা যাবে বলে জানানো হয়।
সম্মেলনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘জাস্ট ট্রিটমেন্ট’ ও ‘রাইট টু ব্রিদ’ গ্লোবাল ক্যাম্পেইন-এর মুখ্য সমন্বয়ক এবং এক শিশুর মা গেইল প্লেজার বলেন, “আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। বহু বছর ধরে আমরা দেখেছি, চিকিৎসার ব্যয় নাগালের বাইরে থাকায় অগণিত শিশু অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আজ সেই দুঃসহ বাস্তবতা বদলাতে শুরু করেছে। রোগী, মা-বাবা ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিলিয়ন ডলারের কর্পোরেট বাধা ভেদ করা সম্ভব হয়েছে—এটাই সবচেয়ে বড় জয়।”
বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য কেবল ওষুধ তৈরি নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে বেশিরভাগ রোগী সেটি পেতে পারে না। আমাদের তৈরি ট্রিকো সেই ব্যবধান কমাবে—আমরা বিশ্বাস করি, এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
আরও পড়ুন
একই সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মা ‘বেক্সডেকো’ নামে আরেকটি ওষুধ বাজারে আনছে, যা ট্রিকোর একটি উপাদান আইভাকাফটার-এর জেনেরিক সংস্করণ। এর দাম হবে প্রতি ট্যাবলেট মাত্র ৫ ডলার। এই পুরো উদ্যোগটি এসেছে থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক, জাস্ট ট্রিটমেন্ট ও রাইট টু ব্রিদ ক্যাম্পেইনের অনুরোধে। মানবিক বিবেচনা ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বেক্সিমকো ফার্মা এই পদক্ষেপ নেয়।
টিআই/এনএফ