বিএমইউ ভিসি
কর্মনিষ্ঠা-মূল্যবোধ অনুসরণ না করলে উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা সংকটে পড়বে
চিকিৎসা শিক্ষার মান ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশে হেপাটোলজি চিকিৎসা শিক্ষার পথিকৃৎ ও লিভার রোগ চিকিৎসা গবেষণার অগ্রদূত অধ্যাপক ডা. মবিন খানের কর্মনিষ্ঠা, সততা ও মানবিক মূল্যবোধ অনুসরণ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, মবিন খানের গুণাবলি অনুসরণ না করলে ভবিষ্যতে উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে অধ্যাপক ডা. মবিন খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণ সভায় এ কথা বলেন বক্তারা।
বিএমইউর হেপাটোলজি বিভাগ, হেপাটোলজি সোসাইটি এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর দি স্ট্যাডি অফ লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, অধ্যাপক ডা. মবিন খান ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি সময়ানুবর্তিতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের এক জীবন্ত উদাহরণ। প্রতিদিন সকাল আটটার আগেই তিনি অফিসে আসতেন, সহকর্মীদের আগে কাজ শুরু করতেন, এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিরতি নিতেন না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি কখনও পিছিয়ে যাননি। তার মতো একজন শিক্ষক, প্রশাসক ও চিকিৎসক আজকের দিনে সত্যিই বিরল।
তিনি আরও বলেন, মবিন খান ছিলেন পারফেক্ট ক্লিনিক্যাল এক্সপার্ট। চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ক্লাসরুম। তিনি যেভাবে হাতে-কলমে শেখাতেন, সেটি আজও স্মরণীয়। তবে তার কর্মনিষ্ঠা, মূল্যবোধ ও একাগ্রতা আজকের তরুণ চিকিৎসক সমাজ যদি ধারণ না করে, তবে ভবিষ্যতে উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা বড় সংকটে পড়বে। কারণ দক্ষতা কেবল বই থেকে আসে না, আসে দায়িত্ববোধ আর সততা থেকে।
এ সময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, অধ্যাপক মবিন খান ছিলেন অ্যাকাডেমিক জীবনের আলোকবর্তিকা। চিকিৎসা সেবায় তিনি যেমন নিবেদিত ছিলেন, গবেষণায়ও রেখেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি নিজের কর্মের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন, কীভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতিটি ধাপ সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানো যায়।
হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম আজম ও বিএমইউর সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন– অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. সেলিমুর রহমান, অধ্যাপক ডা. এম এ কাশেম খন্দকার, অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক, বিসিপিএস-এর সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. এবিএম জামাল, অ্যাসোসিয়েশন ফর দি স্ট্যাডি অফ লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. মোস্তাক আহমেদ, ডা. শাহেদ আহমেদ সেতু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অধ্যাপক ডা. মবিন খান ছিলেন বাংলাদেশে হেপাটোলজির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী। তিনি শুধু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেননি বরং চিকিৎসকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে হেপাটোলজিকে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পরিণত করেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি দেশের চিকিৎসা জগতে সম্মানের আসনে ছিলেন।
স্মরণ সভা শেষে তার সহধর্মিণী মিসেস মুনা খান ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিএমইউর হেপাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক ডা. মবিন খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে একটি ডিজিটাল ক্লাসরুমের উদ্বোধন করা হয়।
উপস্থিত চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা বলেন, অধ্যাপক ডা. মবিন খানের জীবনদর্শন ও পেশাগত সততা নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকদের জন্য চিরন্তন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
টিআই/বিআরইউ