১৬ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা ও রাজস্বখাতে স্থায়ীকরণের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীরা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিএমআরসি ভবনে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট অফিসে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

এদিকে, সিএইচসিপি কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচির ফলে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আখতারুজ্জামানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সিএইচসিপিরা জানান, তারা ২০২৩ সালের ১ মার্চ সরকারি নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বেতন বন্ধ রয়েছে।

তাদের দাবি, ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিএইচসিপি পদটি রাজস্বকরণ করা হলেও, প্রশাসনিক জটিলতায় ২০২৩ ব্যাচকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ আগের তিন ব্যাচ—২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের একই আইনের আওতায় রাজস্বখাতে স্থায়ী করা হয়েছে এবং তারা বর্তমানে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

অবস্থানকারীদের হাতে থাকা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা— ‘বেতন চাই, ন্যায্য প্রাপ্য চাই’, ‘চাকরি আছে—বেতন কই?’, ‘১৬ মাস বেতন নাই, পরিবার চলবে কেমনে ভাই?’ ইত্যাদি স্লোগান এখন ট্রাস্ট অফিসজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

একাধিক সিএইচসিপি জানান, বেতন বন্ধ থাকলেও তারা সেবা বন্ধ করেননি। ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে তদারকিও চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বেতন না পেলেও ভুলত্রুটি পেলে নিয়মিত শোকজ নোটিশ পাচ্ছেন।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত, কাজ করছি নিরলসভাবে। অথচ শুধু প্রশাসনিক গাফিলতিতে আমরা পথে বসেছি। স্বাস্থ্যসেবার নামে যে সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, সেটা এখন কর্মীদের ক্ষুধায় রাখছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না বকেয়া বেতন ও রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

আল-মামুন হোসেন নামক আরেক আন্দোলনকারী সিএইচসিপি বলেন, ‘আমাদের জন্য রাজস্বখাতে পদ সৃজন করা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে, জনপ্রশাসনের অনুমতিও আছে। তবুও আমরা বেতন পাচ্ছি না—এটা কেমন রাষ্ট্রীয় প্রহসন? একই আইনে নিয়োগ পাওয়া অন্যরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে, শুধু আমরা বঞ্চিত। এটা বৈষম্য নয়, অপমান।’

আন্দোলনকারীদের দাবি—

১. নিয়মিত বেতন দিতে হবে।
২. ১৬ মাসের বকেয়া বেতনের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
৩. ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোয় সৃজিত পদে তাদের ন্যস্ত করে চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তারা (সিএইচসিপি) আজও অফিসের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে। আমরা ভেতর থেকে বের হতে পারছি না। কিন্তু তাদের আমরা গতকালই বলে দিয়েছি যে, তাদের বিষয়ে আমাদের আর কিছুই করার নেই।’

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। কর্মীদের চাকরি তো আছেই, এবং তাদের নিয়োগ অনুমোদন আছে—এভিথিং আছে। এই কর্মীদের শুধু বেতন দেওয়াটাই বাকি ছিল। আমি এই কর্মীদের বেতনটা দেবে এই মর্মে একটি আদেশ জারি করেছিলাম, কারণ তাদের শুধু এদেরকে বেতন দিয়ে দিলেই হয়। দুঃখের বিষয় হলো, আমি যে অর্ডার করেছিলাম, মন্ত্রণালয় সেটা স্থগিত করে দিয়েছে।

টিআই/জেডএস