তামাকজনিত অকাল মৃত্যু কমাতে বিদ্যমান আইন দ্রুত সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনগুলো বলেছে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩৫৭ জন মানুষ এবং বছরে অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ তামাক-সম্পর্কিত কারণে মারা যাচ্ছে। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০২৫ অনুযায়ী, এগুলো দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু। দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই অসংক্রামক রোগ থেকে আসে, যার বড় চালিকাশক্তি তামাক।

হৃদরোগ, ক্যান্সার, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ দ্রুত বাড়ছে আর বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হন। পরোক্ষ ধূমপানে মারা যান প্রায় ২৫ হাজার মানুষ, অসুস্থ হয় ৬১ হাজার শিশু।

সংগঠনগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতির বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তামাক থেকে সরকারের আয় ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ক্ষতি, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় চাপ।

বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু জনস্বার্থের প্রশ্নে আইনকে আরও কঠোর করাই একমাত্র টেকসই পথ। আইন যত শক্তিশালী হবে, তামাকজনিত অকাল মৃত্যু তত কমবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপও হালকা হবে।

তারা সতর্ক করেন, তামাক ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ক্যান্সার ও যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ায় এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ডগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে আগ্রাসী বিপণন চালাচ্ছে। ধূমপানমুক্ত জনপরিবেশ নিশ্চিত করা, সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা এবং ভেপ-ই-সিগারেটের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ ছাড়া আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া তারা এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেন–

১. সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল
২. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ
৩. তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম বন্ধ
৪. ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা
৫. খুচরা ও খোলা তামাক বিক্রয় বন্ধ
৬. স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা

যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক এবং বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ।

টিআই/এসএসএইচ