বছরে ২০ লাখ মৃত্যু, লিভার রোগে বাংলাদেশেও বাড়ছে ঝুঁকি : চসিক মেয়র
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ লিভার রোগে মারা যান, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেল বে ভিউয়ের মেজবান হলে অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ (এসএলবিডি)-এর ১৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক লিভার রোগ বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মেয়র।
বিজ্ঞাপন
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। পাশাপাশি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বর্তমানে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। তিনি বলেন, এসব রোগ শুধু পরিসংখ্যান নয়; এগুলো দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে লিভার রোগ এরইমধ্যে মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মেয়র আরও বলেন, বাংলাদেশের লিভার রোগ সংকটের পেছনে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। অনিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টিকাদানের ঘাটতি, দেরিতে রোগ শনাক্তকরণ এবং পর্যাপ্ত স্ক্রিনিংয়ের অভাব পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। অধিকাংশ রোগী সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো জটিল পর্যায়ে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, ফলে চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
দ্রুত নগরায়নের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মতো বড়ো শহরে জীবনযাত্রায় বড়ো পরিবর্তন এসেছে। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের হার বাড়ছে, যা সরাসরি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার ও ফ্যাটি লিভার রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মূল লক্ষ্য প্রতিরোধমূলক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাদানে উৎসাহ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ এবং কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদারের অঙ্গীকার করেন তিনি।
এএসএলবিডি’র গবেষণা, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রশংসা করে মেয়র বলেন, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শুধু একাডেমিক আলোচনা নয়; এখান থেকেই তথ্যভিত্তিক ও কার্যকর জনস্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের ভিত্তি তৈরি হয়।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)–৩-এর লক্ষ্য ৩.৩ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলে সরকার, চিকিৎসক সমাজ ও নাগরিক সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রতিকারমূলক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতিতে গুরুত্ব না দিলে প্রতিরোধযোগ্য লিভার রোগে মানুষের প্রাণহানি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
অনুষ্ঠানে এএসএলবিডি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআর/জেডএস