প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে সরকার। প্রতি মাসে অন্তত এক কোটি বা তার চেয়েও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

শুক্রবার (৩০ জুলাই) অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খুরশীদ আলম বলেন, এককোটি বা তার বেশি মানুষকে প্রতি মাসে টিকা দেওয়ার চিন্তা আছে। কিছু টিকা আমাদের হাতে রয়েছে, বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। এর মধ্যেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রাখছি। তবে এই পরিকল্পনা নির্ধারিত কিছুই না। যেকোনো সময়ই অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবর্তন হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে ২১ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হবে। এসব টিকা ১৪ কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশ মানুষ তা পাবে। ২১ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে এককোটি করে ধরলে ২১ মাস সময় লেগে যাবে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি চলছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আমরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। আগামী ৬ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত বলবেন।

ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় পরিসরের টিকা দিতে গেলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হতেই পারে। আমরা এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছি। মন্ত্রী মহোদয় মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মিটিং করবেন। শুধু আইন প্রয়োগকারী বাহিনী দিয়েই আমরা এত বড় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব না। সবার সহযোগিতা লাগবে।

খুরশীদ আলম আরও বলেন, গ্রামপর্যায়ের তাপমাত্রায় যে টিকা রাখা যাবে, সেগুলোই আমরা দেব। বিশেষ করে সিনোফার্মের তিন কোটি টিকা গ্রামপর্যায়ে দেওয়ার কথা ভাবছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি- ইপিআইর আওতায় দেশে এক লাখ ২০ হাজার স্থায়ী টিকাকেন্দ্র আছে। দিনে প্রায় দুই কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এসব কেন্দ্রে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কেন্দ্র প্রস্তুত করে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার টিকাকেন্দ্র বাড়াতে চাইছে, সেহেতু মজুত-সাপেক্ষে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ‘ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি’ শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে দুই কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ, ফাইজারের এক লাখ, সিনোফার্মের ৮১ লাখ ও মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা এখনও মজুত আছে। মজুত শেষ হওয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া বন্ধ আছে। তবে, নতুন করে দুই লাখ ৪৫ হাজার ডোজ টিকা আসায় সেগুলো ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন কেন্দ্রে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

টিআই/এইচকে