করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার তিন মাস পরও ৪০ শতাংশ রোগী নানা জটিলতায় ভুগছেন। জটিলতার মধ্যে রয়েছে কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, নাকে গন্ধ কম পাওয়া, নাক দিয়ে পানি পরা ইত্যাদি। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের উদ্যোগে পাঁচ শতাধিক রোগীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

রোববার রেসপিরেটরি বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘পোস্ট কোভিড-১৯ পালমোনারি ফাইব্রোসিস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণার এ ফল জানানো হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা পরবর্তী জটিলতা বয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৫০০ রোগীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ মহিলা। গবেষণায় পোস্ট কোভিড রোগীদের নিয়মিত ফলোআপে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার পরও তাদের কারো কারো বিভিন্ন জটিলতা দেখা যাচ্ছে। মানসিক অবসাদ, ভুলে যাওয়া, মাথা ব্যাথা, নাকে কম গন্ধ পাওয়াসহ নানা সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব থেকে উত্তরণ ও মুক্তির উপায় খুঁজে পেতে চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডের ব্যবস্থা করতে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট নির্ধারণে জিনোম সিকোয়েন্সিং, টিকার কার্যকারিতা জানতে টিকা গ্রহীতাদের শরীরে অ্যান্টিবডির অবস্থা নির্ণয়সহ নানা গবেষণা চালু রয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে রোগীদের উপকারী গবেষণায় অবদান রাখতে পারে, সেজন্য ওষুধের ট্রায়ালের সুযোগ দেওয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অত্যন্ত কর্মতৎপর ও গতিশীল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের বুকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সেমিনারে আরো জানানো হয়, করোনা পরবর্তী অনেক রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ায় শরীরের রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায় না। রোগী এ সময় অক্সিজেন স্বল্পতায় ভোগেন। এতে কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা যায়। একে পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলে। এ রোগে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে ফুসফুসের টিস্যু মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এজন্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নেগেটিভ হওয়ার পরও নিয়মিত ফলোআপে থাকা প্রয়োজন। যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা না হলেও রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেডিসিন অনুষদে ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম। গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. মো. মিরাজুর রহমান, ডা. মো. আব্দুর রহিম, ডা. মো. আহাদ মুরশিদ।

সেমিনারে ধন্যবাদ জানান বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মাহমুদুল হক পল্লব। রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন শাহ, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, রেসপিরেটরি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী প্রমুখ।

টিআই/আরএইচ