দেশের নানা বয়সের অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বাতব্যথা রোগে ভুগলেও সেই তুলনায় রিউমাটোলজি বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে অনেক মানুষই ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। আর এসব সমস্যা সমাধানে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলে রিউমাটোলজি বিভাগ চালু করার দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব অর্থ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ দাবি করেন রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাতের ব্যথার প্রকোপ ও ব্যথা বাড়তে থাকে। শতাধিক ধরনের আর্থ্রাইটিস রোগে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভোগেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষজন বেশি সমস্যায় পড়ছেন। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই অসহায় এবং অক্ষমতার জীবন যাপন করেন। তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে সচেতন হওয়া পাশাপাশি সঠিকভাবে রোগটি শনাক্ত করা।

এসময় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত মেধা আছে। তবে ইচ্ছা শক্তি ও ডেডিকেশন বাড়াতে হবে। তরুণ চিকিৎসকদের অনুরোধ করবো, আপনাদের শিখতে হবে। আপনার শেখা আপনাকেই শিখতে হবে। ভালো শেখার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার বস হবে মূল প্রশিক্ষক।

তিনি বলেন, ভালো ডাক্তার হন। দেশ বিদেশে কদর আছে। যদি ফাঁকি দেন বুঝতে হবে, সেই ফাঁকি নিজেকে দিচ্ছেন। কারণ রোগীরা বুদ্ধিমান, তারা কিন্তু আপনাকে ধরে ফেলবে।

চিকিৎসকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাববোধ করছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা আসলে মানসম্মত ট্রেনিংয়ের জায়গায় আটকে আছি। এজন্য ছাত্রদের চেয়ে ফ্যাকাল্টিদের দোষ বেশি। কারণ তারা ফাঁকি না দিলে ছাত্ররা ফাঁকি দিতে পারবে না। চিকিৎসকরা যে যে বিভাগেই কাজ করুক তাকে ইন্টারনাল মেডিসিনের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে। শুরুতেই ভালো চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ ব্যথার কষ্টে থাকা মানুষ কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় জোর দিচ্ছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জানি রিউমাটোলজি বিভাগ নানা ধরনের সংকটের মধ্যে আছে। তারপরও বিভাগের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে সবসময় কাজ করছে। আমরা এখন গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াচ্ছি। এ বিভাগের জন্য আরও বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যবস্থা করবো।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে বাতব্যথা রোগের ওপর শিক্ষা কার্যক্রম অপ্রতুল। বর্তমানে বাতব্যথা রোগের চিকিৎসকের (রিউমাটোলজিস্ট) সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম। তবে ২০২০ সালে দেশের পুরাতন আটটি মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে ৩৩টি রিউমাটোলজিস্টের পদ সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে শুধু সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ছাড়া আর কোথাও এ বিভাগ অদ্যাবধি চালু নেই।

অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির রিউমাটোলজি বিভাগ এখন পর্যন্ত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ রিউমাটোলজিস্ট তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। আরও ৩০ জন রিউমাটোলজিস্ট এ বিষয়ে দেশে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তবে বাত রোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পৌঁছানো সময়ের দাবি। এজন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ সমভাবে যেমন দরকার, তেমনি পাস করা রিউমাটোলজিস্টদের যথাযথ পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া প্রমুখ।

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বাত রোগের ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসায় সাধারণ ভুল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ ও জয়েন্টে ইনজেকশন ব্যবহারের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

টিআই/এসএম