দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবারও যেকোনো মুহূর্তেই বাড়তে পারে উল্লেখ করে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

মঙ্গলবার দুপুরে ৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই করোনা সংক্রমণ কমে গিয়ে আবারও বেড়েছে। এ সময়ে যদি করোনা আবার দেশে আঘাত হানে,  তাহলে কিন্তু আমরা অনেক সমস্যায় পড়ে যাব। কারণ করোনা সংক্রমণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর পর্যায়ে আছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নেই। এই অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, গতিশীল ও সাসটেইনেবল করতে হলে প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ প্রয়োজন।

বিএমএ মহাসচিব বলেন, ৪২তম বিসিএসে যারা পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও অপেক্ষমাণ তালিকায় পড়ে আছেন। এখন নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে গেলে আমাদের যে প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষার যে ধারাবাহিকতা রয়েছে, এতে প্রচুর সময় ব্যয় হবে। সুতরাং আমরা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে চাই এবং নিয়োগ দিতে পারি, তাহলে আমরা আগামীতে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকব। 

বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

এহতেশামুল হক বলেন, আমাদের যেসব চিকিৎসক পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বসে আছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি তাদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক গতি আসবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও মনে করে, উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ না পাওয়া চিকিৎসকদের দাবি যৌক্তিক। আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সুযোগ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও আমরা বিষয়টি উপস্থাপন করব। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের বিষয়টিও তুলে ধরব।

৪২তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ নিয়োগ প্রত্যাশী ডা. মেহেদি হাসান শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও দিনের পর দিন অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা খুবই কষ্টের। আপনারা জানেন গত বছরের ১৬ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন দেশে ১১ হাজার ৩৬৪ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই ঘোষণার পর ৩৮তম বিসিএস থেকে ২৮১ জন, ৪২তম বিসিএস থেকে চার হাজার জন এবং ৪০৯ জন অ্যানেস্থেসিস্ট সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। এরপরও এখনও ৬ হাজার ৭১০ জনের অধিক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। কাজেই ৪২তম বিসিএস থেকে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা ১ হাজার ৯১৯ জনকে যদি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষে নিয়োগ দেওয়া যেত, তাহলে আমরাও দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবদান রাখার সুযোগ পেতাম। একইসঙ্গে এসডিজিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের এই দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, মুখ্য সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন, চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ বিভিন্ন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকেই আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপেক্ষারত চিকিৎসকদের ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। 

ডা. প্রদীপ নামে আরেক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৪২তম বিসিএসের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পদ স্বল্পতার কারণে এখনও নিয়োগ পাইনি। যদিও পিএসসি আমাদের পদ স্বল্পতার কথা বলেছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে এখনও ছয় হাজারের অধিক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। সুতরাং পদ স্বল্পতা নিয়ে পিএসসির দাবি আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবু আমরা নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ চিকিৎসক-নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। 

এ সময় বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। অপেক্ষমাণদের  দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। 

টিআই/এসকেডি