ফুসফুস ক্যান্সারকে ছাড়িয়ে গেল স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সার ক্রমেই বাড়ছে। ২০২০ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ২৩ লাখ নারী। এতে আক্রান্ত রোগীর হিসেবে তালিকার শীর্ষে থাকা ফুসফুস ক্যান্সারকে ছাড়িয়ে গেছে স্তন ক্যান্সার।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এক কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় ক্যান্সারে প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বের এক কোটি মানুষ।
বিজ্ঞাপন
• ২০২০ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ২৩ লাখ নারী
• নারীদের সন্তান নেওয়ার হার কমে গেছে
• বেশি বয়সে প্রথম বার মা হচ্ছেন নারীরা
• বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত এক কোটি ৯৩ লাখ
• দ্বিতীয় অবস্থানে ফুসফুস ক্যান্সার
• ২০২০ সালে ফুসফুস ক্যান্সারে মৃত্যু ১৮ লাখ
• ফুসফুস ক্যান্সার বেশি নিম্ন আয়ের দেশে
গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ছিল বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এ দিন এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ২৩ লাখ নারীর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ক্যান্সার রোগীদের মোট সংখ্যার মধ্যে যা প্রায় ১১.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফুসফুস ক্যান্সার। ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ১১.৪ শতাংশ। এ সময় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ১০ শতাংশের, প্রোস্টেট ক্যান্সার ৭.৩ শতাংশের এবং স্টমাক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫.৬ শতাংশ।
২০২০ সালে বিশ্বের ১৮ লাখ মানুষ ফুসফুস ক্যান্সারে মারা গেছেন। সব ধরনের ক্যান্সারে মৃত্যুর মধ্যে এ হার ১৮ শতাংশ। বছরটিতে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে নারীদের স্তন ক্যান্সার। ক্যান্সারে মারা যাওয়াদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে মারা গেছেন ৬.৯ শতাংশ। কোলোরেক্টাল, লিভার ও স্টমাক ক্যান্সারে স্তন ক্যান্সারের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
স্তন ক্যান্সারে সবচে বেশি মৃত্যু হয় উন্নয়নশীল দেশে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানায়, উন্নত দেশের চেয়ে ফুসফুস ক্যান্সারে নিম্ন আয়ের দেশে মৃত্যুর হার ৩-৪ গুণ বেশি। ধূমপানের কারণে নিম্ন আয়ের দেশে ফুসফুস ক্যান্সারে বেশি মৃত্যু হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে। স্তন ক্যান্সারে সবচে বেশি মৃত্যু হয় উন্নয়নশীল দেশে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান ড. হায়ুনা সং প্রকাশিত রিপোর্টটির নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের রোগীদের ক্যান্সার শনাক্ত হয় পরে। শুরুর দিকেই যাতে ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় এবং ধরা পড়া মাত্রই যাতে চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে দ্রুত নজর দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন ড. হায়ুনা সং।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানায়, করোনা মহামারির কারণে প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রতিবেদনটি সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বলেছে, মহামারি করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। করোনাকালে রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে এ সমস্যা বেশি প্রকট।
আগে কম ছিল এমন অনেক দেশে স্তন ক্যান্সার বেড়ে গেছে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চালানো জরিপ বলছে, করোনাকালে ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা ৪০ শতাংশেরও বেশি ব্যহত হয়েছে। করোনায় মৃত্যুর মিছিলের দিনে ক্যান্সার রোগীরা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার আরও জানায়, করোনা মহামারি ক্যান্সার গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের গতি কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির গবেষণায় দেখা গেছে, আগে কম ছিল এমন অনেক দেশে স্তন ক্যান্সার বেড়ে গেছে।
গবেষণা বলছে, নারীদের সন্তান নেওয়ার হার কমে গেছে এবং বেশি বয়সে প্রথম বার মা হচ্ছেন নারীরা। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক সক্রিয়তা কমে যাওয়া ও মদ্যপানের মতো সমস্যা বাড়ছে।
আগামী ২০৪০ সালে বিশ্বে ২ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সংখ্যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত গতিতে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখনই ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন না হলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর চিকিৎসা খাতের জন্য এটি একটি মারাত্মক বোঝায় পরিণত হবে বলে সতেন করা হয়েছে।
সূত্র : সিবিএস নিউজ
এইচকে