ইউক্রেনের সেই ১৩ সেনার জীবন উৎসর্গ করার খবর ভুয়া?
রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের মুখে ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে গিয়ে দেশের ১৩ সেনার জীবন উৎসর্গের কথা জানিয়েছিল ইউক্রেন। দেশটি দাবি করেছিল, রুশ সামরিক বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়ে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছিলেন তারা।
কিন্তু নতুন একটি তথ্য বলছে, আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানানোর পর রাশিয়ার বোমা হামলায় নিহত হওয়া নয়, ওই ১৩ সেনা হয়তো এখনও জীবিত থাকতে পারেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বর্ডার গার্ড সার্ভিসের একটি ফেসবুক পোস্টে এই তথ্যই জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয় ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সীমান্তরক্ষী সংস্থা স্টেট বর্ডারগার্ড সার্ভিস অব ইউক্রেন (এসবিজিএসইউ)। সেখানে সংস্থাটি জানায়, ‘সমগ্র ইউক্রেনের মতো এসবিজিএসইউ এবং সামরিক বাহিনীও স্নেক আইল্যান্ডের সকল সেনা বেঁচে আছে বলে আশা পেয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছিল, কৃষ্ণ সাগরের ছোট্ট দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ডে দায়িত্বপালন করছিলেন ইউক্রেনের ১৩ জন সেনাসদস্য। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার পর স্নেক আইল্যান্ড অবরোধ করে রাশিয়ার একটি যুদ্ধ জাহাজ।
পরে রুশ সেনারা ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু ইউক্রেনের ওই ১৩ জন সেনা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরই সেখানে বোমা হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী এবং ১৩ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হন।
এদিকে ‘বোমা হামলায় নিহত’ হওয়ার আগে যুদ্ধ জাহাজে অবস্থানরত রুশ সেনাসদস্যদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের শেষ মুহূর্তের কথপোকথনের একটি অডিওক্লিপও টুইটার, টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে ভাইরাল হয়েছিল। পরে সেনাদের এই বীরত্বের ভূয়সী প্রসংসা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া বীর এই সেনাদের মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘ন্সেক আইল্যান্ডে তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। আত্মসমর্পণ না করে তারা সবাই বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। হিরো অব ইউক্রেন (ইউক্রেনের বীর) হিসেবে তাদের সবাইকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হবে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করায় চিরস্থায়ী এই পুরস্কার পাবেন তারা।’
তবে শনিবারই ভোল বদল করে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা এসবিজিএসইউ। ফেসবুকে দেওয়া ওই বিবৃতির পরে তারা জানায়, ন্সেক আইল্যান্ডে দায়িত্বপালনরত সেনাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে কাজ করছে তারা।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সীমান্তরক্ষী সংস্থার ভাষায়, ‘আমরা আশা করি সেনারা খুব শিগগিরই বাড়ি ফিরে আসবে এবং রুশ হামলায় তাদের নিহত হওয়ার যে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, সেটি সঠিক হবে না।’
এদিকে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরুর চতুর্থ দিনে এসে বেশ ভালো সফলতার মুখ দেখেছে রাশিয়া। একদিনে দু’টি শহর দখলের পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরও দু’টি শহর পুরোপুরি অবরোধ করার কথা জানিয়েছে দেশটি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত খেরসন শহর এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বারদিয়ানস্ক শহর রুশ সেনারা পুরোপুরি অবরোধ করেছে বলে দাবি করেছে মস্কো।
এছাড়া নোভা কাখোভকা নামে দেশটির একটি শহরও দখলে নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। নিউ কাখোভকা নামেও পরিচিত এই শহরটি ছোট হলেও কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একইসঙ্গে রোববার ইউক্রেনের খারকিভ শহরেও ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের এই শহরটি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এছাড়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দখল পেতে জোরালো আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
টিএম