বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বিসলে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের মূল্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে তা বিশ্বের দরিদ্রদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বজুড়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের প্রধান রপ্তানিকারক। যুদ্ধ ইতোমধ্যে শস্য উৎপাদন ব্যাহত করেছে এবং দামও বাড়িয়েছে। বিসলে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের এই সংঘাত বিশ্বজুড়ে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলেছে। আপনি যখন মনে করেন পৃথিবীতে নরক এরচেয়ে আর খারাপ হতে পারে না, এখন সেটিই হতে যাচ্ছে।

রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে এক সময় ইউরোপের ‘রুটির ঝুঁড়ি’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হতো। বিশ্বের মোট গম রফতানির প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং বীজ ও তেলের মতো সূর্যমুখী পণ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ রফতানি করে এ দুই দেশ। এছাড়া ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা রফতানি করে। 

যুদ্ধের ফলে শস্য উৎপাদন এবং এমনকি বিশ্বব্যাপী গমের দাম দ্বিগুণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বিজনেস ডেইলি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিসলে বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের আগের চার বছরেই বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি থেকে বেড়ে ২৭ কোটি ৬০ লাখে উন্নীত হয়েছে। এর কারণ হিসাবে তিনি সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাসকে ‘নিখুঁত ঝড়’ হিসাবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল থেকে অধিক পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানির কারণে বর্তমান সংকটের প্রভাব বিশ্বের কিছু দেশে বিশেষভাবে পড়তে পারে। লেবানন প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্যশস্য ইউক্রেন থেকে আমদানি অথবা ইউক্রেনে রফতানি করে। ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিশিয়া এবং আমি আরও কিছু দেশের কথা বলতে পারি, যারা নিজেদের ‘রুটির ঝুড়ি’ ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভরশীল।

ডব্লিউএফপির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সুতরাং আপনি এখন রুটির ঝুড়ি থেকে আক্ষরিক অর্থে তাদের হাতে রুটি তুলে দিতে পারবেন না। এটা একেবারে বাস্তবতার অবিশ্বাস্যরকমের বিপরীত চিত্র।’

‘আমাদের ভূমি রক্ষা করছি’

নরওয়ের রাসায়নিক কোম্পানি ইয়ারা ইন্টারন্যাশনাল। দেশটির এই কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম সার উৎপাদনকারী। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে পরিচালিত হচ্ছে এই কোম্পানি। ইয়ারা ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সারের উৎপাদন ব্যাহত হলে তা ফসলের ফলনের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানতে পারে; যার ফলে ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট’ দেখা দেবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সালিশি বিশেষজ্ঞ ও ইউক্রেনের আইনজীবী ইভানা ডোরিচেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের কিছু কৃষক ইতোমধ্যে মাঠ ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, যেসব মানুষের মাঠে কাজ করা দরকার, তারা এই মুহূর্তে আমাদের ভূমি রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন। কারণ তারা যদি ভূমি রক্ষা করতে না পারেন, পরবর্তীতে তাদের কাজ করার কিছুই থাকবে না। আপনি এই মুহূর্তে এমন একজন ব্যক্তিকেও পাবেন না, যিনি দেশ রক্ষায় কোনো সহায়তা করার চেষ্টা করছেন না।

ডোরিচেঙ্কো বলেছেন, যুদ্ধের কারণে সাধারণত কৃষিপণ্য রফতানিতে ব্যবহৃত সরবরাহ চেইন ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশটির বন্দরে সব ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল স্থগিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘জাহাজগুলো বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না। পণ্য লোডও করতে পারছে না। এটি একেবারে এক যুদ্ধক্ষেত্র। তবে দুঃখের বিষয় হল, ইউক্রেন থেকে এখন রফতানি করা যাবে, এমন কোনো কিছুই নেই।

ইভানা ডোরিচেঙ্কো বলেন, এটা ব্যবসার জন্য বিশাল ক্ষতি; মানবিক দিক থেকেও। কারণ ইউক্রেন আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতো গোষ্ঠীগুলোর কাছে পণ্য পাঠাতে পারছে না।

ইউক্রেন সংঘাতের আগেই খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বিশ্বের কিছু দেশে সংকটের পর্যায়ে পৌঁছেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিবিদ ওয়ানডিল সিহলোবো বলেছেন, তিনি আফ্রিকা এবং শস্য আমদানিকারক অন্যান্য কিছু দেশের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে চিন্তিত।

এসএস