যুদ্ধের কারণে গম সংকট, আশা দেখাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
ছবি: আলজাজিরা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে গমের দাম এর মধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে মোট গমের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের যোগান আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। দেশটির জাতীয় গবেষণা সংস্থা ব্যুরো অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রিসোর্স ইকোনোমিক্স অ্যান্ড সায়েন্সেসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি ২০২১-’২২ অর্থবছরে এর মধ্যেই ৩৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ায় অর্থবছরের গণনা শুরু হয় জুন মাস থেকে। চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে ব্যুরো অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রিসোর্স ইকোনোমিক্স অ্যান্ড সায়েন্সেসের গবেষকরা।
করোনা মহামারির ২ বছরে অর্থনীতির স্থবিরতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য খাতের মতো কৃষি খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া গত ২০২১ সালে উত্তর গোলার্ধের বেশ কিছু দেশে খরা, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যহত হয়েছে কৃষি উৎপাদন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গম উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গম উৎপাদন কমেছে ১০ শতাংশ। ইউরোপে এই হার কমেছে ৩ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে গমের মোট যোগানের প্রায় এক চতুর্থাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে; কিন্তু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে এই দু’টি দেশ থেকে গমের চালান এখন অনেক কমে গেছে।
মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যুদ্ধের প্রভাবে এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে গমের দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামে প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে, তা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল মাঝারি আয়ের দেশগুলো। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, মিসর তার বার্ষিক চাহিদার ৭০ শতাংশ গম বাইরের দেশ থেকে আমদানি করে। লেবাননে এই হার আরও বেশি— ৮০ শতাংশ।
এই অবস্থায় অস্টেলিয়ার গম বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের বক্তব্য, যেখানে বিশ্ববাজারে মোট গমের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের যোগান আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে, সেখানে চলতি অর্থবছরে দেশটিতে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে আশাব্যাঞ্জক একটি খবর।
অস্ট্রেলিয়ার খাদ্যশস্য রপ্তানিকারকরা অবশ্য এতটা আশাবাদী নন। দেশটির খাদ্যশস্য রপ্তানিকারী অন্যতম কোম্পানি অস্ট্রেলিয়ান গ্রেইন একপোর্টসের স্বত্বাধিকারী টাইসন হেওয়েট আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমি যদ্দুর জানি, কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টন গমের চালান বিশ্ববাজারে যায়। আমাদের পক্ষে এই পরিমাণ গম রপ্তানি করা সম্ভব নয়। এমনকি, সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করলেও নয়।’
‘সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই ব্যাপারটি বোঝা যায়। হঠাৎ করে যদি ২৫ শতাংশ গম বিশ্ববাজারে আসা বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। শুধু অস্ট্রেলিয়া কেন, কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।’
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাত্তা বিষয়ক প্রকল্প ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসাইন এ সম্পর্কে আলজাজিরাকে বলেন, ‘ইউক্রেন এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় আছে এবং সেখানকার জনগণ নিজেদের জীবন রক্ষার্থে লড়াই করছে।’
‘কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে যে বিপর্যয় দেখা দেবে, তা কেবল রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যেই থাকবে না। এই দু’টি দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত মানুষজনকেও সেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।’
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ