ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে উরসুলা ভন ডার লেন ও জো বাইডেন, ছবি : সিএনএন

রাশিয়ার গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি গ্যাস কেনার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শুক্রবার এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে।

গত বছর ইউরোপে ২ হাজার ২০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। নতুন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটার, অর্থাৎ মোট ৩৭ কোটি ঘণমিটার গ্যাস পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেন সামরিক অভিযান পরিচালনার প্রতিবাদ ও রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইউরোপ। এই মহাদেশের মোট বার্ষিক চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে।

বর্তমানে ইউরোপের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ গ্যাস আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; কিন্তু নতুন চুক্তি কার্যকর হলে এই সরবরাহ ২৪ শতাংশে উন্নীত হবে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার তিন দিনের সরকারি সফরে ব্রাসেলস গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার সফরের দ্বিতীয় দিন, শুক্রবারই এই ঘোষণা দিল ইইউ।

এই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেন বলেন, ‘নিজের প্রতিবেশীদেরকে চাপে রাখা ও তাদের সঙ্গে জবরদস্তিমূলক আচরণের অস্ত্র হিসেবে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ ব্যবহার করছেন পুতিন, এবং এই সম্পদ বিক্রির মুনাফা তিনি ব্যবহার করছেন যুদ্ধ পরিচালনা খাতে।’

‘আমি জানি, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে ইউরোপকে মূল্য দিতে হবে; কিন্তু এটা এখন প্রয়োজন এবং দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপ ইউরোপকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন জানান, বর্তমানে ইউরোপের বার্ষিক চাহিদার এক তৃতীয়াংশ গ্যাসের সরবরাহ আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং নতুন চুক্তি অনুযায়ী এই আসন্ন দিনগুলোতে সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় হিসেবে আমরা রাশিয়া থেকে দূরে থাকতে চাই এবং আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিশ্বস্ত জ্বালানি সরবরহাকারীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ বাড়াতে চাই।

গত ২৪ তারিখ ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে আর তেল-গ্যাস ওে কয়লা কিনবে না দেশটি; আর যুক্তরাজ্য বলেছে, ২০২২ সাল শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে দেশটির সরকার।

এই দুই দেশের দেখাদেখি পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব দিয়েছিল ইইউতে, কিন্তু জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, এখনই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় আসেনি।

এদিকে, ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়ছে তেল-গ্যাসের দাম। চলতি মাসের প্রথম দিকে বৈশ্বিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে ১৩৯ ডলারে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গ্যাসের দামও।

কত কয়েকদিনে তেলের দাম কিছু কমলেও এখনও গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে বিশ্ব বাজারে।

এসএমডব্লিউ