‘জেড’ চিহ্ন সম্বলিত টি-শার্ট বিক্রি করছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি দোকান। গত ২৫ মার্চের ছবি

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ও রাশিয়াপন্থি যোদ্ধাদের সামরিক বহরে থাকা ‘জেড’ চিহ্ন অনেকের নজরে এসেছে। এরপরই এই প্রতীকটি কার্যত রাশিয়াপন্থিদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি রাশিয়ার সমর্থনে মস্কোপন্থিদের অনেকেই ‘জেড’ চিহ্নটি প্রদর্শন করছেন।

তবে জার্মান ভূখণ্ডে এমন কোনো প্রতীক প্রদর্শনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে জার্মানি। জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যেসব ব্যক্তি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে জার্মানিতে ‘জেড’ অক্ষরটি প্রদর্শন করবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। সোমবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

এর আগে জার্মানির বার্লিন প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা জেড প্রতীকের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে শহর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এই ধরনের কাজের জন্য শাস্তি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে জার্মানির বাভারিয়া ও লোয়ার স্যাক্সনি প্রদেশ।

জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জেড অক্ষরটি অবশ্যই নিষিদ্ধ নয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটির ব্যবহার ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমর্থক হিসেবে কাজ করতে পারে।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

একইসঙ্গে হামলা শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার সেনাদের ট্যাংক ও সামরিক যান রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী এলাকাসহ ইউক্রেনের বহু শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব সামরিক যানের সবগুলোতেই বাইরের অংশে ইংরেজি ‘জেড’ অক্ষর লেখা। এছাড়া ইউক্রেনে মস্কোপন্থিদের পোশাকেও রয়েছে এই ‘জেড’ চিহ্ন।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের উদ্দেশে রুশ সামরিক যানগুলো ছেড়ে যাওয়ার আগে সেগুলোতে ‘জেড’ চিহ্ন লিখে রাখা হচ্ছে। অনেকে এই জেড চিহ্নকে ‘জা পোবেডি’ (বিজয়) হিসেবে উল্লেখ করছেন। অনেকে আবার এটিকে ‘জাপাড’ (পশ্চিম) বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে মনে করছেন।

আর এতে করে মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্ভাবিত এই প্রতীকটি নতুন রুশ আদর্শ ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে রুশ এই প্রতীকের অনেক সমর্থকও খুঁজে পাওয়া গেছে। রাশিয়ার অনেক বেসামরিক নাগরিক এবং ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় তাদের গাড়িতে ‘জেড’ চিহ্ন ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

এর পাশাপাশি রাশিয়ার আগ্রাসনে সমর্থন জানানো রুশ নাগরিকরা এই জেড প্রতীকটি ব্যবহার করছেন এবং মস্কোপন্থিরা তাদের সমাবেশে ও পতাকায়ও অক্ষরটি প্রদর্শন করছেন।

সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন একটি অপরাধ। এবং এই কারণে কেউ যদি প্রকাশ্যে এই আগ্রাসনের পক্ষে অবস্থান নেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নজর রাখছে। এবং এই বিষয়ে পৃথকভাবে নজরদারি ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় নেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রদেশ যে উদ্যোগ নিয়েছে আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।’

পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, জেড প্রতীকের মতো এই ধরনের চিহ্নগুলো রুশ সহযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব যানবাহন শনাক্ত করতে এবং ফ্রেন্ডলি ফায়ার এড়াতে সংকেত হিসেবে কাজ করে।

এছাড়া রুশ সামরিক যানে জেড প্রতীকের ব্যবহার এবারই প্রথম নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়া কতৃক ক্রিমিয়া দখলের সময়ও রুশ সামরিক যানগুলোর গায়ে ‘জেড’ চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

মূলত, যুদ্ধক্ষেত্রে কোন পথ দিয়ে যেতে হবে, মুখোমুখি পড়ে যাওয়া ট্যাংক নিজের দেশের নাকি শত্রুপক্ষের, কোন ধরনের চিহ্ন দেখলেই আঘাত হানতে হবে, এসব বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের এমন সংকেত যুদ্ধে বরাবরই কার্যকর।

টিএম