পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গদি বাঁচানোর লড়াই ক্রমান্বয়ে আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বিরোধীদের তৎপরতা আপাতত অনাস্থা প্রস্তাবের যাঁতাকল থেকে ইমরান খানের বেরিয়ে আসার পথকে জটিল করে তুলছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অন্যতম জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) হাত মিলিয়েছে দেশটির বিরোধীদল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে। আর এতেই রাতারাতি আরও বড় সংকটের মুখে পড়েছেন ইমরান খান।

পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা এবং এমকিউএম একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। এমকিউএমের রাবাতা কমিটি এবং পিপিপির সিইসি ওই চুক্তি অনুমোদন দেবে। আমরা আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব। অভিনন্দন পাকিস্তান।’

ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশটির বিরোধীরা যেভাবে জোটবদ্ধ হচ্ছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব অথবা অনাস্থা ভোটের আগে পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে পিটিআই।

ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অন্যতম জোটসঙ্গী এমকিউএম-পি বিরোধী দল পিপিপির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোয় দেশটির জাতীয় পরিষদে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা এখন ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। এমকিউএম-পি জোট ছাড়ায় ইমরান খানের সরকারের সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৪। জোটসঙ্গীদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার সময় জাতীয় পরিষদে পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন। 

দেশটির ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে জিততে কমপক্ষে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এখন ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পিটিআইয়ের কোনো সদস্যেরও সমর্থনের প্রয়োজন নেই পিপিপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের।

বিদেশি অর্থায়নে পাকিস্তানের কিছু মানুষ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার যড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান। তার দলের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আসাদ উমর বলেছেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রের চিঠি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালকে দেখাতে প্রস্তুত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: অনাস্থা ভোটের আগে ইমরানের দলের ৫০ মন্ত্রী নিখোঁজ

গত রোববার ইসলামাবাদে জনসমাবেশে ইমরান খান বলেছিলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের লোকজনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ লোকই অসাবধানতাবশত ব্যবহার হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যবহার করছে। আমরা জানি কোন জায়গা থেকে আমাদের চাপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের লিখিতভাবেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জাতীয় স্বার্থের সাথে আপস করব না।’

বিরোধীদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধার প্রস্তাবে এমকিউএম-পির সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্তটি করাচির প্রশাসক মুর্তজা ওয়াহাবের তৈরি একটি খসড়াতে উভয়পক্ষ স্বাক্ষর করার পর এসেছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও টিভি বলছে, স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারিও রয়েছেন।

ইমরান খান সরকারের জোট ত্যাগ করে বিরোধীদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধার তথ্য নিশ্চিত করেছেন এমকিউএম-পির নেতা ফয়সাল সাবজওয়ারি। এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধ বিরোধীগোষ্ঠী এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।’

এমকিউএম-পির একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে দলটির নীতি নির্ধারণী পরিষদ রাবাতা কমিটি বুধবার তাদের কার্যালয়ে বৈঠকে বসবে; যেখানে খসড়া চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। আগামী ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের সময় নির্ধারিত রয়েছে।

এসএস