পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। রোববার পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিরোধী দলীয় নেতারা বলছেন, তারা এখন আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
  
রোববার পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরুর পর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশটির সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যহীনতার অভিযোগ তোলেন।

তার বক্তৃতার পরপর পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অধিবেশন মূলতবি ঘোষণা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় এখন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পাক সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ কী বলছে?

দেশটির সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র, সংবিধান এবং আইনের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের আনুগত্য স্বীকারের কথা বলা হয়েছে।

১. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।

২. যেখানেই থাকুক না কেন সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন প্রত্যেক নাগরিকের অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য। এছাড়া পাকিস্তানে যারা বসবাস করেন তাদের প্রত্যেকেরও দায়িত্ব।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া, অনুচ্ছেদ ৫ কার্যকর করা কি আইনসম্মত?

পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞ সারুপ ইজাজ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই পদক্ষেপ সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতিরও লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, ‘যখন অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেছেন যে ভোট হবে, তখন এই পদক্ষেপ সাংবিধানিক বিধি-বিধানের প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে হয়।’

এই মুহূর্তে সংকটের একমাত্র সমাধান সুপ্রিম কোর্ট দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পাক এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি পার্লামেন্টে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে এবং এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। আদালত যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, এতে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তাহলে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ বাতিল এবং অকার্যকর ঘোষণা করা হবে।

এই আইনজীবী বলেন, আদালত যদি স্পিকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে অনাস্থা প্রস্তাব আবারও ভোটের জন্য তোলা হবে।

সারুপ ইজাজ বলেন, আমার মতে— আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং একাধিকবার সেটি করেছেনও। যদিও আদালত পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ, তারপরও স্পিকার যদি সংবিধান উপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে তিনিও দায়মুক্তি পেতে পারেন না।

দেশটির অপর আইন বিশেষজ্ঞ মুনীব ফারুক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শকে ‘সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া রীমা ওমর নামের অপর এক আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কোনো যদি কিন্তু নয়, স্পিকারের নির্দেশনা পরিষ্কার অসাংবিধানিক।

সূত্র: জিও টিভি, এনডিটিভি।

এসএস