পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোট খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর দেশটিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে; তা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশে আগাম নির্বাচনের যে ডাক দিয়েছেন তার বৈধতা নিয়ে সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে।

দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম মিত্র মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট ছেড়ে যাওয়ায় সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান।

রোববার তার বিরুদ্ধে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অধিবেশন শুরুর পর অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন সংসদের ডেপুটি স্পিকার।

বিরোধীদের সাথে এই বিরোধ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর প্রায় অর্ধেক সময় ধরে সেনা শাসনের অধীনে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটিকে ব্যাপক সাংবিধানিক সংকটের মুখে ফেলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, বর্তমান পার্লামেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান নতুন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেই নির্বাচনে ইমরান খান জয়ী হলেও আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির বিরোধী দলগুলোও আগাম নির্বাচন চায়, যদিও সংসদীয় ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানের রাজনৈতিক পতন ঘটিয়েছে তারা।

পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ। সোমবার পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জাতি আজ হতবাক। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যমও ইমরান খানের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

‘ইমরান খানের শেষ চক্রান্ত গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করবে, সেটি কেউ অনুমান করতে পারেন নাই,’ লিখেছে ডন।

পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন চান। যদিও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট, নির্বাচন কমিশন এবং আদালতের শুনানির ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।

পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের পদ অনেকাংশে আনুষ্ঠানিক। দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ইমরান খান অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন। যার অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফের কাছে চিঠি লিখে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট আলভি।

তবে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না সেটি নির্ভর করছে আদালতের আইনি প্রক্রিয়ার ফলাফলের ওপর। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চে অনাস্থা ভোট খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু হয়েছে।

এখন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট সংসদ পুনরায় শুরু, নতুন নির্বাচন অথবা ইমরান খানের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক কাজের প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দিতে পারেন। তবে সংসদীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই উল্লেখ করে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ইমরান খান বলেছেন, তিনি কোনো অসাংবিধানিক কাজ করেননি। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো চক্রান্ত। যদিও ওয়াশিংটন এই দাবি অস্বীকার করেছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস