ফাইল ছবি

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কায় সংকট চলছেই। ক্ষেত্র বিশেষে চলমান অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা থেকে টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করা দেশগুলো এখন ভারতীয় রপ্তানিকারকদের কাছে আসতে শুরু করেছে। আর এভাবেই দ্বীপরাষ্ট্রটির সংকটে স্বপ্ন বুনছে ভারত।

মূলত নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণেই শ্রীলঙ্কা থেকে মুখ ফিরিয়ে ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করা দেশগুলো। ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রোববার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

গত শুক্রবার ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই’র সঙ্গে কথা বলার সময় ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউপি সিং বলেন, ‘আগে শ্রীলঙ্কা থেকে পণ্য আমদানি করত এমন কিছু দেশ এখন ভারতের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে, কারণ শ্রীলঙ্কা বর্তমানে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার বেশ কিছু কোম্পানিকে ইতোমধ্যেই কিছু অর্ডার দেওয়া হয়েছে। মূলত তিরুপুর হচ্ছে তামিলনাড়ুর বস্ত্র শিল্পের কেন্দ্রস্থল।’

ইউপি সিং বলেন, গত বছর ভারতের টেক্সটাইল সেক্টরের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তার দাবি, ভারত বর্তমানে ৩৪০ লাখ বেলেরও বেশি তুলা উৎপাদন করে থাকে। তবে সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কা থেকে অর্ডার ভারতের দিকে চলে আসার কারণে এর ব্যবহার ও চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বেশি হতে চলেছে।

ভারতের এই টেক্সটাইল সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তুলা আমদানিতে কোনো আমদানি শুল্ক নেই। তার ভাষায়, ‘বিপরীত দিকে, আমাদের আমদানিকারকদের ১১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যার ফলে খরচ বেড়ে যায় অনেক বেশি। এ কারণে আমদানি শুল্ক উঠিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন আমদানিকারকরা।’

ইউপি সিং বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে নির্দিষ্ট বাজারে সুবিধা পাচ্ছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এবং এতে করে আমাদের রপ্তানিকারকরা অসুবিধায় ছিল। আর এই কারণে ভারতীয় টেক্সটাইল রপ্তানিকারকদের জন্য এই দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করা খুব কঠিন। যদি আমাদের তুলার আমদানি শুল্ক না দিতে হয় তাহলে সেটি অবশ্যই ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংস্থা ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টারস অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট এ শক্তিভেল বলছেন, ‘শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ক্রেতারা এখন তিরুপুর এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনসহ ভারতের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় আলোচনা করতে শুরু করেছে। কিছু আলোচনা অর্ডারে পরিণত হতে পারে। এটি একটি ভালো সুযোগ। ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো আলোচনা হচ্ছে এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে কিছু অর্ডার আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলো থেকে ভারতীয় রপ্তানিকারকরাএখন সাড়া পাচ্ছেন। তার ভাষায়, ‘এসব দেশ মূলত বুননকৃত পোশাক, শার্ট, টি-শার্ট এবং শিশুদের পোশাক নিতে আলোচনা করছে। আমরা আশাবাদী যে এই আলোচনাগুলো অর্ডারে পরিণত হবে।’

টিএম