করোনাভাইরাস মহামারি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো হাজারও কঠিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশ। এরপরও ধর্ম ও জাতপাত নিয়ে লড়াই সমসাময়িক ভারতে ক্রমেই বাড়ছে। ফের তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী হলো প্রতিবেশী এই দেশটির উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রায়বেরেলি।

রাজ্যটিতে এক দলিত কিশোরের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে উচ্চবর্ণের কয়েকজন যুবক। মারধরের পাশাপাশি দলিত ওই কিশোরকে এক অভিযুক্তের পা চাটতেও বাধ্য করা হয়। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

এদিকে দলিত কিশোরকে নির্যাতন এবং তাকে পা চাটতে বাধ্য করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে ভাইরাল হয়েছে। এরপরই শোরগোল পড়ে যায় দেশটিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার জেরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত ৭ জনকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলিতে নির্যাতনের শিকার ওই দলিত কিশোর স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। নির্যাতনের ঘটনায় ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন যুবক দলিত ওই কিশোরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসময় মাটিতে কান ধরে বসে থাকা অবস্থায় ভয়ে কাঁপতেও দেখা যায় তাকে।

এছাড়া নির্যাতনের সময় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন দলিত কিশোরকে ‘ঠাকুর’ শব্দের বানান করতে বলে। প্রসঙ্গত, ঠাকুর সম্প্রদায় উত্তরপ্রদেশে উচ্চবর্ণের মধ্যে পড়ে।

মারধরের সময় অভিযুক্তদের বলতে শোনা যায়, আর এই কাজ করবি? এরপর মোটরসাইকেলে বসে থাকা এক অভিযুক্তের পা চাটতে বলা হয় দলিত কিশোরকে, শারীরিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ওই কিশোর তাই করে।

কিন্তু কী অন্যায় করেছিল সে, যে তার ওপর এমন অত্যাচার চালানো হলো! স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই দলিত কিশোরের ওপর যারা অত্যাতার চালায়, তাদেরই একজনের পারিবারিক জমিতে শ্রমিকের কাজ করেন ওই কিশোরের মা। আর নির্যাতনের দিন নিজের মায়ের পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক চাইতে এসেছিল সে।

আর সেই ‘অপরাধেই’ তার ওপর অত্যাচার চালায় অভিযুক্তরা। যদিও নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দা ও সমালোচনার মুখেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ১০ এপ্রিল নির্যাতনের এই ঘটানাটি ঘটে। নির্যাতিত বালক লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর ৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই জাতে উচ্চবর্ণ।

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্যাতিত ছাত্র থানায় অভিযোগ জানিয়েছিল। এরপরই তাকে লাঞ্ছিতকারীদের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে।’

টিএম