ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (ফাইল ছবি)

টানা প্রায় দুই মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের তীব্র হামলায় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি অনেকটাই বিপর্যস্ত। আর তাই পরাশক্তি রাশিয়াকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কাছে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা বারবারই দাবি করছে কিয়েভ।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনের হাতে উন্নত অস্ত্র থাকলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এতোদিনে শেষ হয়ে যেত। বুধবার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, সামরিক আগ্রাসনে রাশিয়া যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে সেই তুলনায় যদি ইউক্রেনের কাছে উন্নত অস্ত্র থাকতো তাহলে আমরা ইতোমধ্যেই এই যুদ্ধ শেষ করে দিতাম।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতাদের সাথে সকল বৈঠক ও আলোচনায় আমি বলেছি, এটি অন্যায় যে- ইউক্রেন এমন কিছুর জন্য এখন অন্যদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে যেগুলো আমাদের অংশীদার ও মিত্রদেশগুলো বছরের পর বছর ধরে সঞ্চয় করে চলেছে।

তিনি দাবি করেন, (রাশিয়াকে মোকাবিলায়) ইউক্রেনের প্রয়োজন এমন অস্ত্র ও গোলাবারুদ যদি সেসব দেশের কাছে থেকে থাকে তাহলে (ইউক্রেনের) স্বাধীনতা রক্ষায় সাহায্য করা, হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিকের জীবন বাঁচানো তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ভলোদিমির জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আগামী সপ্তাহগুলোতে সেসব অস্ত্র আমরা হাতে পেলে তা হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করবে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিযোগ, ইউক্রেনের পূর্বে অবস্থিত ডনবাসের খারকিভ এবং ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি এসব অঞ্চলে হামলায় বেসামরিক অবকাঠামোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে এখনও লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে নতুন করে আল্টিমেটাম দিয়েছে রাশিয়া। নতুন এই সময়সীমায় বুধবারই যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া মারিউপোল শহরের বেশিরভাগ অংশ দখলে নেওয়ার দাবি করলেও ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের অবশিষ্ট একটি অংশ শহরটির আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নিয়েছে। মূলত কারখানার ভেতরে রুশ বাহিনীর হাতে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে দিন দু’য়েক আগে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের ওই দলটিকে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দিয়েছিল মস্কো। এমনকি আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল দেশটি। তবে আগে দেওয়া আল্টিমেটামে কোনো ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ না করায় বুধবার এই একই সময়সীমা ফের নবায়ন করে রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সম্পূর্ণ মানবিক নীতির ওপর ভিত্তি করে ২০ এপ্রিল মস্কোর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে অস্ত্র জমা দিতে জাতীয়তাবাদী ব্যাটালিয়ন ও বিদেশী ভাড়াটে যোদ্ধাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী।’

ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরপরই দেওয়া ওই ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া মারিউপোল শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দার ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।’

টিএম